ঢাকা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ , ২০ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রেক্ষিত বাংলাদেশ 

মতামত

অরিন্দম কুমার পাল

প্রকাশিত: ০০:০০, ২২ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রেক্ষিত বাংলাদেশ 

বর্তমান বাংলাদেশে সরকারি তথ্যমতে সর্বমোট বনভূমির পরিমাণ মোট ভুমির ১৫-১৭ শতাংশ, যেটা মূলত আদর্শ পরিমাণ ২৫ শতাংশের অর্ধেকের একটু বেশি। সারা দেশের অবস্থা হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আরো খারাপ হয়ে যাবে। বনভূমির সংজ্ঞানুসারে, সরকারি উদ্যোগে বন ধ্বংস বন্ধ হয়েছে পুরোপুরি কিন্তু এখনো বনায়ন শুরু করা যায়নি পুরোপুরি। 

ঢাকা কীভাবে সুস্থ বাতাস পাবে? এর কি কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? সমস্ত বনভূমির মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা আর সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চল বাদ দিলে থাকবে শুধু উত্তরাঞ্চলের শালবন। এর আয়তন বা ঘনত্ব সুন্দরবন বা পাহাড়ি বনের তুলনায় অনেক কম। উপকূলীয় অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে বনায়নের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ ঢাকাসহ আশেপাশের অন্য ঘনবসতিপূর্ণ এবং শিল্প উন্নত এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে করা হয়নি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাওয়ার ফলে উদ্যোগটিকে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট উপযোগী হিসেবে ধরে নেয়া হলেও বর্তমানে অন্যান্য এলাকায় এলাকায় বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ আবশ্যক বলে ধরে নেয়া যায়।  

বনাঞ্চল বলতে নির্দিষ্টভাবে পাঁচ মিটারের বেশি উচ্চতা সম্পন্ন গাছের কমপক্ষে শূন্য দশমিক ৫ হেক্টর/ শূন্য দশমিক শূন্য ৫ স্কয়ার কিলোমিটার এর একটি নিরবচ্ছিন্ন সন্নিবেশকে বোঝায়। ফল বাগান এবং কৃষি বনায়ন ব্যবস্থা, শহুরে পার্ক এবং বাগানের গাছগুলো কোনো বনভূমির অন্তর্গত নয়। এখানে আবার একটি বিষয় হলো এখন যদি বনায়ন প্রকল্প শুরু করা হয় তাহলে গাছগুলোর সাইজ ৫ মিটারের বেশি হতে লেগে যাবে পাঁচ বছর। বাংলাদেশে যেসব গাছ রয়েছে তার মধ্যে আকাশমনি, শিশু এসব গাছের গ্রোথ রেট অনেক বেশি, যা ২-৩ বছরের মধ্য ৫ মিটার হয়। এখানে আবার বিষয় হলো এসব গাছ থেকে আসলে কাঠ এবং অক্সিজেন বাদে অন্য কোনো কিছু পাওয়া যায় না।

সুতরাং এমন গাছপালা নির্বাচন করতে হবে যেগুলো আসলে একাধিক কাজে লাগানো যেতে পারে। অনেকে হয়তোবা ঢাকাতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বৃক্ষরোপণকে বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার একটি কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে যে, শহরে এই ধরনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি কখনো বনায়নের বিকল্প কোনো কিছু হতে পারে না। এলাকায় অক্সিজেনের ভারসম্য বজায় রাখতে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই সমাধান প্রয়োজন। ঢাকাতে গাছ যতোই লাগানো হোক না কেনো, ঢাকার পরিবেশও ঠান্ডা করা সম্ভব না। অক্সিজেন লেভেলের কথা বাদই দিলাম। কারণ. হলো যে সব বাতাস উত্তর দিক থেকে ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় সেগুলোর অক্সিজেন লেভেল অনেক কম থাকা স্বাভাবিক। কারণ, উত্তরাঞ্চলে বনভূমির পরিমাণ অনেক কম। পৃথিবীর মোট উৎপাদিত অক্সিজেনের ৫০ শতাংশের বেশি সমুদ্র থেকে আসে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সেটি খুব বেশি কাজে আসছে না।

ইদানিং ঢাকাসহ বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া পরিবর্তনের ওপরে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়ার পরও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বনভূমি উজাড় করা বন্ধ হওয়া ছাড়া অন্য তেমন কোনো উদ্যোগে সফলতা দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মোট বনভূমির আনুমানিক ৪০ শতাংশ সুন্দরবন এবং ৪৭ শতাংশ পার্বত্য বনাঞ্চল, বাকি ১২০০ বর্গ কিলোমিটার শালবন উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলাতে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে। 

বায়ুপ্রবাহের তারতম্যের কারণে বাংলাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় নয় মাসের বেশি শুধুমাত্র তিন মাস দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে বায়ুপ্রবাহ চলতে থাকে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে যেখানে বাংলাদেশের মোট বনাঞ্চল ছিলো প্রায় ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি সেখানে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে তা ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। বর্তমানে তীব্রতাপ প্রবাহ এবং বিভিন্ন এলাকায় অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বাংলাদেশ বনাঞ্চলের ঘাটতি। উত্তর অঞ্চলের বনভূমিগুলো দীর্ঘদিন যাবত সম্প্রসারিত হয় না বা সম্প্রসারণ করার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। পার্বত্য এলাকার বনভূমি পার্বত্য এলাকাগুলোকে সংরক্ষণ করে এবং সাধারণ বন (যেকোনো এলাকায় যে বনভূমি বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে ওঠে এবং উজার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) এর ঘনত্বের ওপরে সেই অঞ্চলের পরিবেশ অনেকটাই নির্ভর করে।
ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে শিল্প কলকারখানা স্থাপন এবং বনভূমির অপর্যাপ্ততার কারণে বর্তমানে তার প্রবাহ এবং অক্সিজেন স্বল্পতার মতো খুবই মারাত্মক কিছু ঘটনা বর্তমানে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া সারা দেশে গড় তাপমাত্রা প্রায় রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

যেহেতু শিল্প কলকারখানা বন্ধ করা সম্ভব নয় এবং বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের পরিবার সংক্রান্ত খুবই দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকরী জাতীয় পর্যায়ের পলিসি প্রয়োজন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নও প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি এলাকায় পৃথকভাবে বনভূমির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে কৃত্রিম বনায়নের মাধ্যমে এবং বড় শহরগুলোর পাশে অধিক ঘনত্বসম্পন্ন বনাঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অন্যথায় আগামী ১০ বছরের পরে হয়তো বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি। ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো তাদের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয় এবং কৃত্রিমভাবেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে গবেষণার মাধ্যমে, উপযুক্ত স্থানে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে এবং কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সবসময় মাথায় রাখতে হবে। 

আবাদি জমিতে গবেষণার মাধ্যমে যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী ও উৎপাদনশীল উদ্ভিদের চাষ করা যায়। এই ধরনের একটি উদ্যোগের আগে অনেক গবেষণা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরেকটি খুবই কার্যকরী উদ্যোগ হতে পারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ২২ শতাংশ কার্বন  নিঃসরণ কমানো সম্ভব এবং যদি জাতীয়ভাবে প্র্যাকটিস শুরু করা হয় তবে সেটিকে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। বাংলাদেশের মতো একটি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ সব থেকে কার্যকরী একটি পন্থা হিসেবে পরিবেশ বিষয়ক নীতি হিসেবে প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন খুবই ফলপ্রসু হতে পারে।

বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শিল্পে পরিবেশবান্ধব এবং দূষণমুক্ত অনুশীলন চালু করার জন্য বিভিন্ন প্রবিধান ও পর্যবেক্ষণ চালু করেছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিবেশ বান্ধব অনুশীলন বিকাশ না করা পর্যন্ত পুরো পরিবেশগত সমস্যাটি একা কারখানার ওপর নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। পরিবেশবান্ধব অনুশীলনগুলো এমন আরো ক্রিয়াকলাপ যা দৈনন্দিন জীবনে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে এবং তাদের অভ্যাস করে তোলে। যেমন-বিদ্যুৎ, যানবাহন ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র বাছাই করার সময় পরিবেশ বান্ধব যন্ত্রপাতি নির্বাচন করা, বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি ও প্রচারণা চালানো ইত্যাদি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি এখন বাংলাদেশের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন।

লেখক: গবেষক

জনপ্রিয়