ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ , ৪ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পিয়ের ক্যুরির মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

পিয়ের ক্যুরির মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

বিখ্যাত ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী পিয়ের ক্যুরির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তাকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি, তার স্ত্রী মারি ক্যুরি ও ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী অঁরি বেক্যরেলের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত গবেষণায় রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম নামক দুইটি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে এই সম্মান প্রদান করা হয়।

পিয়ের ক্যুরি ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিলো ওজেন ক্যুরি ও মায়ের নাম ছিলো সোফি-ক্লের ক্যুরি। ওজেন ক্যুরি ছিলেন একজন চিকিৎসক; তার কাছ থেকেই পিয়ের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ছোটবেলাতেই পিয়ের গণিতে, বিশেষ করে স্থানিক জ্যামিতিতে দক্ষতা প্রদর্শন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৮ বছর বয়সে গণিতে স্নাতক উপাধি লাভ করেন।

১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে পিয়ের প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি তাপীয় তরঙ্গসমূহের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের গণনা সংক্রান্ত গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। এরপর তিনি তার অগ্রজ জাক ক্যুরির সহায়তায় কেলাসসমূহের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। তারা পিয়েৎসোবিদ্যুৎ নামক ধারণাটি আবিষ্কার করেন, যা ছিলো যান্ত্রিক চাপের অধীন কেলাসের ভিতরে বৈদ্যুতিক বিভব। এই ক্রিয়াটি পরবর্তীতে বহু ব্যবহারিক যন্ত্রপাতিতে প্রয়োগ করা হয়, যাদের মধ্যে মাইক্রোফোন অন্যতম। এর পরে পিয়ের ক্যুরি কেলাসসমূহের প্রতিসাম্য মূলনীতিটি সূত্রায়িত করেন, যাতে একটি বিশেষ ন্যূনতম অপ্রতিসাম্যের অভাবযুক্ত পরিবেশে একটি বিশেষ ভৌত প্রক্রিয়া সম্পাদন করার অসম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে পিয়ের ক্যুরিকে প্যারিসের শিল্প পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবীক্ষক নিযুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি চুম্বকত্বের ওপর গবেষণা করেন, যা বর্তমানে সুপরিচিত। পরীক্ষণের সুবিধার জন্য তিনি একটি সুবেদী পরিমাপ যন্ত্র নির্মাণ করেন, যার নাম ব্যাবর্ত-তুলা (Torsion balance)। এই তুলা বা নিক্তিটি বর্তমানে ক্যুরি তুলা বা ক্যুরি নিক্তি হিসেবে পরিচিত এবং আজও এটি ব্যবহার করা হয়। চুম্বকত্বের গবেষণায় ক্যুরি আবিষ্কার করেন যে চুম্বক পদার্থগুলো একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছালে তাদের চৌম্বক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে; এই তাপমাত্রাটিকে ক্যুরি বিন্দু নামে ডাকা হয়।

১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে পিয়ের ক্যুরি পোলীয় বিজ্ঞানী মারিয়া সালোমেয়া স্ক্লদোভ্স্কা নামক একজন গবেষণা সহকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা এক বছর পর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুলাই বিয়ে করেন। মারিয়া নিজের নাম বদলে মারি ক্যুরি নামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী অঁরি বেক্যরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পরে পিয়ের ও মারি ক্যুরি এই বিষয়ে আরো গভীর গবেষণা শুরু করেন। ক্যুরি দম্পতি আবিষ্কার করেন যে বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের চেয়ে পিচব্লেন্ড নামক ইউরেনিয়াম অক্সাইড সমৃদ্ধ খনিজটির তেজস্ক্রিয়তা বেশি।

এই খনিজটির ওপর গবেষণা করে তারা ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমে পোলোনিয়াম ও পরবর্তীতে রেডিয়াম নামক দুইটি তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। আকরিক থেকে বিশুদ্ধ মৌলগুলো নিষ্কাশন করতে গিয়ে পিয়ের নতুন এই তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর ভৌত ধর্মের ওপর গবেষণা সম্পাদন করেন, যেমন সেগুলোর দীপ্তি ও রাসায়নিক ক্রিয়া। তিনি পরবর্তীতে তিন ধরনের তেজস্ক্রিয় কণার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন, যেগুলো বৈদ্যুতিকভাবে ধনাত্মক, ঋণাত্মক ও নিরপেক্ষ প্রকৃতির। পরে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এই কণাগুলোকে আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নামকরণ করেন। পিয়ের ক্যুরি পরবর্তীতে রেডিয়ামের শারীরতাত্ত্বিক ক্রিয়া নিয়েও পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন; তার এই কাজ পরবর্তীতে কর্কটরোগ বা ক্যানসারের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ চিকিৎসার উদ্ভাবনে ব্যবহৃত হয়েছে।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে পিয়ের ক্যুরি বিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের পাশাপাশি মারি ক্যুরির সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রয়্যাল সোসাইটির ডেভি পদক লাভ করেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তাকে ফরাসি বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্যপদে নির্বাচিত করা হয়।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে প্যারিসের একটি সড়কে ঘোড়ায় টানা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে পিয়ের ক্যুরি মৃত্যুবরণ করেন।

জনপ্রিয়