ঢাকা শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ , ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

ইলিশে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান

বিবিধ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ৪ মে ২০২৪

সর্বশেষ

ইলিশে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান

ইলিশ মাছের অন্ত্রে নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।  প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া জীবদেহে বসবাসকারী অণুজীব, যা পোষকের বৃদ্ধি, উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধসহ প্রতিবেশে অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীরা এমন নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন, যা আগে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী পিএলওএস ওয়ানে সম্প্রতি ‘‌আনভেইলিং দ্য গাট ব্যাকটোরিয়াম ডাইভারসিটি অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ইন দ্য ন্যাশনাল ফিশ হিলসা অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ছয়জনের গবেষণা দলের পাঁচজনই বাংলাদেশী।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশের অন্ত্রের অণুজীবগুলোর গঠন ও বৈচিত্র্য উদঘাটন করা হয়। ওই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বশেমুরকৃবির ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (আইবিজিই) অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। বিজ্ঞানী দল মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেন। বাংলাদেশে ইলিশের প্রধান প্রধান আবাসস্থল, যথাক্রমে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাওয়া মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এবং স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করেন তারা এবং ইলিশের অন্ত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান।

বর্তমানে বাংলাদেশের অ্যাকুয়াকালচারে বিদেশ থেকে আমদানি করা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া প্রোবায়োটিক ফর্মুলেশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, ইলিশের অন্ত্রে পাওয়া উপকারী এসব ব্যাকটেরিয়া দেশের অন্যান্য মাছের খাবারের সঙ্গে প্রয়োগ করা গেলে দেশের অ্যাকুয়াকালচারে তৈরি হতে পারে নতুন সম্ভাবনা। তবে ইলিশের অন্ত্রে আবিষ্কৃত এসব নতুন ব্যাকটেরিয়া কোন রোগ প্রতিরোধের জন্য কাজ করবে, সে বিষয়ে গবেষণা চলমান।

এ গবেষণার দলনেতা বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো এবং বশেমুরকৃবির আইবিজিইর অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম  জানান, এ গবেষণায় শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা ও ল্যাকটোব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া। মাছের বাস্তুতন্ত্রে বিচরণকারী এসব প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ইলিশের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া এসব ব্যাকটেরিয়া ইলিশের স্বাদ গঠনেও ভূমিকা রাখে।

এ গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ড. এম নাজমুল হক জানান, ‌গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা ও পলিনেলা) শনাক্তকরণ, যা আগে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে লক্ষ করা যায়নি। এ ধরনের অগ্রসরমাণ গবেষণা ইলিশ মাছের টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছ কখনো রোগাক্রান্ত হয়েছে, এমন কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন নেই। সুতরাং নতুন আবিষ্কৃত প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলো ইলিশের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারে সম্ভাবনার কথাও বলেন তারা।
 

জনপ্রিয়