গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার কেএল জুবিলি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং কোলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন।
ছেলেবেলা থেকেই ব্রজেন দাস সাঁতারে পারদর্শী ছিলেন। তিনি সাঁতার চর্চা করতেন বুড়িগঙ্গা নদীতে। শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনকে বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতা চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরকম একটি প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে।
এটি সহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্রজেন দাস নিজেকে একজন সেরা সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রিত হন।
এতে সাড়া দিয়ে তিনি শীতলক্ষ্যা এবং উন্মত্ত মেঘনায় সাঁতার চর্চা করে নিজেকে তৈরি করেন এবং একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। তখনকার দিনে স্টিম শিপ এ দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নিতো।
ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার অব্যবহিত পূর্বে ব্রজেন দাস ভূমধ্যসাগরে কাপ্রি থেকে নেপ্লস সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সাঁতরিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য তার আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে।
ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২৩টি বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগী অংশ নেয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন ব্রজেন দাস। এই সাঁতার শুরু হয়েছিলো ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট মধ্যরাতে, এবং তা শেষ হয় পরদিন শেষ বিকেলে। অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাঝপথেই ক্ষান্ত দিলেও ব্রজেন দাস সংকল্পে অটুট থেকে অগ্রগামীদের একজন হয়ে সাঁতার শেষ করেন এবং ইতিহাসে নিজের নাম লেখান।
১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ এই তিন বছরে ব্রজেন দাস সর্বমোট ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের অভিযানে তিনি সময় নেন সাড়ে দশ ঘণ্টা। এর পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করার সর্বনিম্ন রেকর্ড সময় ছিলো ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। ব্রজেন দাস ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন।
