ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে ছাড়িয়ে যেতে চায় চীন

আন্তর্জাতিক

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ২ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৯:২৪, ২ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে ছাড়িয়ে যেতে চায় চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত বছর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হেইলংজিয়াং প্রদেশ সফরে যান। এটি চীনের রাস্টবেল্ট (যেখানকার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে) অঞ্চলের একটি। চীনের অর্থনীতিতে এখন কী ধরনের সমস্যা জেঁকে বসেছে, এই অঞ্চল তার একটি নজির।

হেইলংজিয়াং অঞ্চলের জন্মহার চীনের মধ্যে সবচেয়ে কম; এখানকার বড় বড় শহরে বাড়ির দাম কমছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়ের পর দেখা যায়, এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি একেবারে হয়নি বললেই চলে; উল্টো গভীর মূল্যহ্রাসের কবলে পড়েছে এই অঞ্চল।

দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, সি চিন পিংয়ের পরিকল্পনা আছে। গত বছর সেই সফরে গিয়ে সি চিন পিং প্রাদেশিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেনো ‘নতুন উৎপাদিকা শক্তির’ বিকাশ ঘটান। এরপর এই শব্দবন্ধ বেশ কয়েকবার সংবাদপত্র ও সরকারি অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হয়েছে। গত মাসে দেশটির রাবার স্ট্যাম্প সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং জিয়াংকিং এই শব্দবন্ধকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন; অর্থাৎ ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যে নব চীনের সূচনা হয়, সেই সময় যে নীতির ভিত্তিতে তা হয়েছিলো, তার সঙ্গে এই ‘নতুন উৎপাদিকা শক্তি’ শীর্ষক স্লোগানের তুলনা করেছেন তিনি। সংস্কার ও বাজার উন্মুক্ত করার স্লোগান চীনের জাতীয় জীবনে এখনো জ্বলজ্বলে—নতুন এই স্লোগানও দীর্ঘদিন থেকে যাবে বলে ধারণা।

চীনের কর্মশক্তি যেমন কমছে, তেমনি সে দেশে সম্পত্তির চাহিদাও কমছে। আগে যত মানুষ গ্রাম থেকে শহরে যেতেন, এখন তত মানুষ যাচ্ছেন না। আবাসন খাত থেকে যে ফাটকাবাজি করে মুনাফা করা যাবে, তার নিশ্চয়তা এখন আর নেই এবং সম্ভাব্য বাড়ি ক্রেতারাও এখন আগেভাগে ফ্ল্যাট কিনতে অনাগ্রহী। কারণ, তাদের মনে ভয়, বিপর্যস্ত আবাসন কোম্পানিগুলো ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার আগে নিঃস্ব হয়ে যায় কি না।

আবাসন খাতের সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস যেমন কমেছে, তেমনি জমি বিক্রি করে স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে। কোভিডজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও চীনের অর্থনীতিতে গতি আসছে না। পুনরুদ্ধার যা হচ্ছে, তা সব খাতে সমানভাবে হচ্ছে না। 

অন্যদিকে সরকারের ব্যয় এত বেশি নয় যে সব কর্মক্ষম মানুষের কাজ সৃষ্টি হতে পারে। এসব কারণে টানা তিন ত্রৈমাসিকে চীনের মূল্যহ্রাস হচ্ছে, যেখানে অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে।

চীন এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পর্যায়ে আছে, এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ সাধারণত সেবা খাতমুখী হয়; অর্থাৎ উৎপাদন খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সেবা খাত নির্ভর হয়। কিন্তু চীন সরকারের হৃদয় যেন অন্য কোনো খানে লুকিয়ে আছে। মহামারির কারণে চীনের উৎপাদিত পণ্য, যেমন সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে শুরু করে এক্সারসাইজ বাইকের চাহিদা বেড়েছে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দেশের ভেতরেও লিথোগ্রাফি মেশিন থেকে শুরু করে বিমানে ব্যবহারের উপযোগী স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদনের চাহিদা নতুন করে বেড়েছে।

দেশটির ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপিতে উৎপাদন খাতের হিস্যা ধরে রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে; ২০০৬ খ্রিষ্টা্ব্দে যা ছিলো জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে যা এক-চতুর্থাংশের কিছুটা ওপরে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মনে করেন, উৎপাদন খাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগের মধ্য দিয়ে নতুন এই উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ ঘটবে। এই কথার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, প্রযুক্তি খাতে চীনের উচ্চাভিলাষ আগের চেয়ে বেড়েছে এবং অর্থনীতির সঙ্গে তা আরও ভালোভাবে সমন্বিত হচ্ছে। 

চীনের নেতারা প্রযুক্তি খাতে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে পুরো জাতিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই গত মার্চ মাসে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার যে বাজেট দিয়েছে, সেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাতে বরাদ্দ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। অন্য কোনো খাতে বরাদ্দ এতটা বাড়েনি।

জনপ্রিয়