ঢাকা সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ , ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

বাকৃবির সরিষার নতুন জাত উদ্ভাবন

দেশবার্তা

আমাদের বার্তা, বাকৃবি

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

বাকৃবির সরিষার নতুন জাত উদ্ভাবন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক তেলবীজ সরিষার একটি নতুন জাত উদ্ভাবনের দাবি করেছেন। উদ্ভাবিত সরিষার নতুন জাতটি স্বল্পমেয়াদী, উচ্চ ফলনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু। এ নতুন জাতটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাউ সরিষা-৯’। উদ্ভাবিত জাতটি গত ৩১ মার্চ জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেয়েছে। নতুন এই জাতটির উৎপাদনকাল ৭৮ থেকে ৮২ দিন। জাতটির বীজে তেলের পরিমাণ প্রায় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দেশে প্রচলিত সরিষার সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। এই জাতের সরিষার প্রতি আড়াই কেজিতে ১ লিটার তেল পাওয়া সম্ভব বলে দাবি ওই গবেষক দলের। জাতটির হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ২ টন, যা প্রচলিত স্বল্পমেয়াদী সরিষার জাতগুলো থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ ছাড়করণ উপলক্ষে বুধবার সকালে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গবেষকদলের প্রধান গবেষক ও বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. আরিফ হাসান খান রবিন। ওই গবেষণায় সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিলেন একই বিভাগের একাধিক স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষক জানান, বাউ সরিষা-৯ চাষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অল্টারনারিয়া ব্লাইট, পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ খুবই কম। জাতটি পরিমিতরূপে বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু  হওয়ায় উৎপাদন প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজননের গবেষণা মাঠ এবং বাকৃবির পার্শ্ববর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় জাতটির পরীক্ষামূলক চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ তে অলিক এসিডের পরিমাণ শতকরা ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ, ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অনুপাত ২৫:১, যা সয়াবিন তেলে ১৮:১। বাউ সরিষা-৯ থেকে প্রাপ্ত তেলের স্মোক পয়েন্ট ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, যা সয়াবিন তেলের তুলনায় প্রায় ১৪ ডিগ্রি বেশি। সরিষার তেলে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোনেট বিশ্লেষিত হয়ে আইসো থায়োসায়ানাইট তৈরি হয়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। ভোজ্য তেল হিসেবে বাউ সরিষা-৯ সরিষার তেল সয়াবিন তেলের তুলনায় অধিক স্বাস্থ্যসম্মত।

গবেষক আরো জানান, দেশে বর্তমানে মোট উৎপাদিত সরিষার তেলের বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এই উৎপাদন দ্বারা দেশের মোট ভোজ্য তেলের চাহিদার মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়। এ কারণে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার সরিষা, সয়াবিন এবং পাম তেল আমদানি করতে হয়। দেশীয় প্রক্রিয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ৪০ শতাংশ ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এমতাবস্থায় বাউ সরিষা-৯ জাতটি চাষে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জাতটি স্বল্পমেয়াদী হওয়ায় আমন এবং বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে এটি চাষ করা যাবে।

গবেষণার বিষয়ে গবেষক জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) তিনটি প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সাত বছর যাবৎ এই জাতটি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রগুলো স্বনামধন্য ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশকিছু গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে জাতটির অধিকতর উৎকর্ষ সাধনে উচ্চতর গবেষণা চলমান রয়েছে এবং আরো কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জনপ্রিয়