ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দেশের উত্তরের খাদ্যভান্ডার বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁ। ধান উৎপাদনের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে গেছে নওগাঁ। আগামী ২২ মে থেকে গুটি আম বা স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে বাজারে আসছে নওগাঁর আম। এ ছাড়াও নওগাঁর ঐতিহ্য আম্রপালি আমসহ অন্যান্য জাতের সুস্বাদু ও সুমিষ্ট আম পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ভোক্তাদের।
বর্তমানে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা উপজেলা সাপাহারের পাশাপাশি পোরশা, নিয়ামতপুর, ধামইরহাটসহ জেলার ১১টি উপজেলাতে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক ভাবে আম বাগান। আর দেশের মধ্যে শুধুমাত্র নওগাঁতেই উৎপাদন হওয়া সুস্বাদু আম্রপালি আমের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই নওগাঁয় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের আমের চাহিদা ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আম সংগ্রহ করার জাতীয় ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল রেখে এক সভায় বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ওই সভায় আমচাষী, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ২৮ মে থেকে গোপালভোগ, ২ জুন হিমসাগর, ৭ জুন নাক ফজলি, ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ২০ জুন ফজলি, ২২ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি আম-৪, গৌড়মতি ও কাটিমন আম সংগ্রহ করা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে জেলার ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা থেকে ৪লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন বাগানে উচ্চ মূল্যের ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪ আমচাষসহ দেশি-বিদেশি প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ করা হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আমের মুকুল কম আসায় ও প্রচণ্ড দাবদাহে কিছু আম ঝড়ে যাওয়ার কারণে আমের ফলনে কিছুটা তারতম্য হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আমচাষী আব্দুর রশিদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, দিন দিন আম চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাগানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে এই আম চাষ। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘাতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার কারণে বিঘা প্রতি ৪-৫হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, চলতি মৌসুমে নওগাঁ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে। চলতি বছর আমের মুকুল কিছুটা কম আসলেও গাছে বর্তমান থাকা আমের আকার ও রং ভালো থাকার কারণে আমচাষীরা ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গতবছরের চেয়ে চলতি বছর নওগাঁ থেকে আরো বেশি পরিমাণ আম বিদেশে রপ্তানি করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুতই নওগাঁর বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করতে আসবেন, যোগ করেন তিনি।