
ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্ট তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্ট্যাটাসে মাহফুজ লেখেন, ‘আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ মোকাবিলা করছি। নিছক কিছু মূর্তি বা দালান নয়। মূর্তি না ভেঙে আমাদের উচিত আমাদের শত্রুদের শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা, শক্তি ও হেজেমনি গড়ে তোলা। ভাঙার প্রকল্প থেকে সরে এসে দিনকে দিন আমাদের গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়া উচিত।’
আরো পড়ুন:
সকাল থেকে চলছে বঙ্গবন্ধু ভবন নিশ্চিহ্নের কাজ
তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুরের পর আ*গুন
যশোরে শেখ মুজিবের ম্যুরাল-ভাস্কর্যসহ নামফলক ভাঙচুর
বুলডোজার দিয়ে গু*ড়িয়ে দেয়া হলো আমু-সাদিক আব্দুল্লাহর বাড়ি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা লেখেন, ‘লীগ বা হাসিনা সে অর্থে কিছুই না, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের এক্সটেনশন। আর, আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ তার হেজেমনি তৈরি করছে বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রকল্পনা, দেশে এবং ডায়াসপোরায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে। আমাদের পালটা হেজেমনিও এ তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বাহারের বাড়ি ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ
গুঁ*ড়িয়ে দেয়া হয়েছে হানিফের বাড়ি
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন শুধুই ইতিহাস
মাহফুজ আলম লেখেন, ‘ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হন।’
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন শিগগিরই শুরু হবে জানিয়েছে ফেসবুকে মাহফুজ আরও লেখেন, ‘আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন ও জুলাই গণহত্যার বিচারের কাজ ও চলমান। এ মাসেই এ কাজগুলো আরো গতি পাবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ নিছক ভাঙা নয়, বরং বিকল্প গড়ারও লড়াই। নতুন বন্দোবস্তে আমরা ভাঙার চেয়ে গড়ার দিকে গুরুত্ব দিতে চাই।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মাহফুজ স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘পুনশ্চ: খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী থাকবে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ। এজন্যই আমাদের উচিত, সৃজনশীল শক্তির বিকাশ ঘটানো এবং সার্বিকভাবে এ আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পদ্ধতি নেওয়া। কারণ, এ লড়াই মাত্র শুরু হলো। অন্তত, এক দশক পরে এ লড়াইয়ের একটা মীমাংসা হয়তো হবে। অথচ, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি সামান্যই।’
তিনি লেখেন, ‘রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা - নেতিবাচক এনার্জি, কিন্তু অভ্যুত্থানের পর আমাদের এ সকল এনার্জিকে ইতিবাচক রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। এখনো সে সুযোগ হারিয়ে যায়নি। আগামী অন্তত এক দশকব্যাপী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য আমাদের সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগানো দরকার।’
সবাইকে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানিয়ে স্ট্যাটাসটিতে মাহফুজ লেখেন, ‘ইতিহাস আমাদের সুযোগ দিয়েছে। এবার আমাদের জিততে হবে। আর জেতার উপায় একটাই- রাষ্ট্রকল্প, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ ও মর্যাদাবান মানবসম্পদ গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের ফেরাসত তথা দূরদৃষ্টি দিক।’