ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ , ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

গাধা নিয়ে টানাটানি!

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

গাধা নিয়ে টানাটানি!

গাধা। প্রধানত মালবাহক হিসাবে এই প্রাণীর ব্যবহার গোটা বিশ্বে। কিন্তু এই গাধাই এখন বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে অন্যতম চর্চিত বিষয়। শুধু তা-ই নয়, গাধা নিয়ে চীন ও আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে দড়ি টানাটানিও শুরু হয়ে গিয়েছে।

আফ্রিকা প্রথম গাধাকে গৃহপালিত পশুর তকমা দেয়। তার পর গোটা বিশ্বেই এই পশুর ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। কমপক্ষে পাঁচ হাজার বছর ধরে গাধাকে মালবাহক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাধার প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে।

পাহাড়ি রাস্তা বা দুর্গম এলাকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কোনও ভারী জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য গাধা ব্যবহার করা হয়। বিশ্বে আনুমানিক ৫০ কোটি মানুষ গাধার উপর নির্ভরশীল। শুধু মাল বওয়াই নয়, কৃষিকাজেও গাধাকে ব্যবহার করতে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়।

কিন্তু গাধা নিয়ে যে দু’দেশের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হতে পারে, তা কয়েক দশক আগেও কল্পনার বাইরে ছিল। এই টানাপড়েনের কেন্দ্রে রয়েছে একটি ওষুধ। সেই ওষুধ তৈরিতে নাকি গাধার প্রয়োজন। ব্যস, সেই থেকে ধীরে ধীরে বিশ্ব জুড়ে গাধার সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে।

ইজিয়াও নামে এক ওষুধ তৈরি করতে প্রয়োজন গাধার চামড়ার। সেই চামড়া সংগ্রহ করতে বেড়েছে গাধা হত্যার ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, চোরাচালানকারীদের নজরেও রয়েছে গাধা। অবৈধ ভাবে এই গৃহপালিত পশু কেনাবেচা চলে দেদার।

গাধা নিয়ে বিরোধ মূলত চীনের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলির। ইজিয়াও নামে এই ওষুধের চাহিদা রয়েছে চীনেই। সেই ওষুধ তৈরি করতে বছরে লাখ লাখ গাধা মারা শুরু হয় ড্রাগনের দেশে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে চীনে গাধার সংখ্যা ছিল ১০ কোটির বেশি। সেই সংখ্যাই কমতে কমতে একটা সময় দাঁড়ায় মাত্র দু’কোটিতে।

ইজিয়াও নিয়ে আলোচনা এখন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দখল করলেও চীনে এই ওষুধের ব্যবহার বহু পুরনো। ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই ওষুধের ব্যবহার হয়ে আসছে দেশটিতে। প্রথমে রাজপরিবার ও সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যেই ইজিয়াওয়ের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তবে এখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যেই এই ওষুধের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইজিয়াওয়ের রমরমা বাড়ে চীনের বাজারে। ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে একটি টেলি সিরিজ়। সেখানে ইজিয়াও ওষুধের ব্যবহার দেখানো হয়। যা সাধারণ মানুষের মনে দাগ কাটে।

চীনাদের বিশ্বাস, এই ওষুধ রক্ত পরিস্রুত করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গাধার চামড়া থেকে বার হওয়া এক ধরনের তরল ইজিয়াও ওষুধ তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ।

চীনের সংবাদমাধ্যম সূ্ত্রের খবর, ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে হু হু করে। ১০ বছর আগে ৫০০ গ্রাম ইজিয়াওয়ের দাম ছিল প্রায় ১২০০ টাকা। এখন এই ওষুধের ৫০০ গ্রামের দাম ৩৫ হাজার টাকার বেশি।

ইজিয়াও তৈরিতে গাধার চামড়া কী ভাবে ব্যবহার করা হয়? প্রথমে মৃত গাধার শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। তার পর সেই চামড়াকে গরম পানিতে ফোটানো হয়। তার পর সেই চামড়া থেকে কয়েকটি ধাপে এক প্রকার তরল বার করার কাজ হয়। সেই তরলই ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে।

ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনে টান পড়তে থাকে গাধার। নিজেদের দেশে গাধার সংখ্যা কমে যাওয়ায় চীন বিদেশ থেকে গাধার চামড়া আমদানি শুরু করে। সে ক্ষেত্রে চীন গাধার চামড়া জোগানের জন্য নির্ভর করতে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপর।

সেই কারণে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গাধা চোরাচালানকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেনিয়ার এক বাসিন্দা স্টিভকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, কী ভাবে গাধা চুরির ঘটনা বেড়েছে আফ্রিকায়। জীবিকা নির্বাহের জন্য গাধাই ছিল স্টিভের মূল ভরসা। তাঁর কাছে ১০টা গাধা ছিল। কিন্তু রাতারাতি সব ক’টি গাধা চুরি হয়ে যায়। পরে জানতে পারেন তাঁর গাধাগুলিকে মেরে বিক্রি করা হয়েছে।

চীনে ইজিয়াওয়ের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে গাধা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক পণ্যে পরিণত হয়। শুরু হয় আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে চীনের বিরোধ। গাধা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ।

রফতানি বন্ধ করা হলেও গাধা জবাইয়ের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে চোরাচালানকারীরা। গাধা মেরে তার চামড়া অবৈধ ভাবে চীনে পাচার শুরু হয়।

চীন প্রধানত ঋণ দিয়ে থাকে আফ্রিকার দেশগুলিকে। কিন্তু গাধা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই চীন আফ্রিকার দেশগুলিকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলতে শুরু করে। সুদের হারও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সমস্যায় পড়ে আফ্রিকান দেশগুলি।

জনপ্রিয়