ঢাকা রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি

বিবিধ

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রকাশিত: ০০:১০, ৭ মে ২০২৪

সর্বশেষ

যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি

‘যতো লিখেছি তার চেয়ে বেশি ছিঁড়েছি। আমি যখন একটা উপন্যাস লিখে পড়ি, ভালো হয়নি মনে হলে ছাদে গিয়ে আগুন ধরিয়ে পানি গরম করে চা বানিয়ে খেয়েছি। জাস্ট আনন্দের জন্য।’

সম্প্রতি নিজের লেখা বই নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে এমনটাই বলেন শিক্ষাবিদ ও নন্দিত লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি, আমার কখনো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হবে হবে না, কিন্তু আমি ওনার সঙ্গে প্রত্যেকদিন কথা বলি। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন- স্যার, আমি লেখক হতে চাই, কি করবো? আমার একটাই উত্তর- লেখক হওয়া খুবই সোজা। তুমি যতো বেশি পড়বে ততো ভালো লেখক হবে, পড়তে হবে।

যিনি যতো বেশি পড়বেন, তিনি ততো ভালো লেখক হবেন। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ কী সেটাও ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আমি যখন খুবই ভালো একটা বই পড়ি, সেটা লেখার জন্য আমার হাত-পা নিষ্পেষ করতে থাকে, আমি কখন লিখবো।  

নন্দিত এ লেখক আরো বলেন, প্রথম বিষয় হচ্ছে. আপনাদের মধ্যে যারা লেখক হতে চান, বই পড়েন। যদি বই না পড়েন, খামাখা লেখক হওয়ার চিন্তা করে লাভ নেই। আমাকে ওইদিন একজন জিজ্ঞেস করছেন, আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে লেখাটি ভালো হয়নি। আমি বলেছি- হ্যাঁ, আমি যতো লিখেছি তার থেকে বেশি ছিঁড়ে ফেলেছি। আমি যখন একটা উপন্যাস লিখে দেখেছি উপন্যাসটি ভালো হয়নি, তখন ছাদে গিয়ে সেটি পুড়িয়ে পানি গরম করে চা বানিয়ে খেয়েছি। জাস্ট আনন্দের জন্য।’

তিনি বলেন, যখন লিখবেন, মনে করবেন এটা আরো ভালো করা সম্ভব ছিলো। আরো যত্ন নিয়ে লেখা উচিত ছিলো। বই পড়াটা কেনো গুরুত্বপূর্ণ আমি বলি, আমি একবারও বলিনি যে বই পড়বেন জ্ঞান অর্জন করার জন্য কিংবা কোনো একটা কাহিনি জানার জন্য বা বই পড়বেন বিনোদনের জন্য। আমি বলছি বই পড়তে হবে শুধু আপনার মস্তিষ্কটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমি জানি, আমাদের বাংলাদেশে এখন আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে বই লিখছে। মানুষ লিখছে না, যন্ত্র বই লিখছে। সে বই ছাপা হচ্ছে, মানুষ না বুঝে সে বই পড়ছে, আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে

জাফর ইকবাল বলেন, এখন একটা কঠিন সময়এই সময় আমি যদি প্রস্তুত না থাকি, আজ থেকে পাঁচ বছর পরে, আমি টোটালি ইউজলেস হয়ে যাবো। আমি একটা মানুষকে ফেলে দেবো, তোমাকে আমি নেবো না, তোমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমি একটা সফটওয়্যার দিয়ে তুমি যা যা করতে পারো সেটা আমি করতে পারি। খামাখা তোমাকে নেবো কেনো। সেজন্য এখন মানুষ হওয়াটা খুবই প্রয়োজন হয়ে গেছে পৃথিবীব্যাপী।

তিনি বলেন, আমি আমার চোখ দিয়ে দেখবো। আমি স্মার্টফোনের স্ক্রিন দিয়ে দেখতে রাজি না। আমি কিছুদিন আগে কক্সবাজার গিয়েছি, দেখলাম সবাই হাতে স্মার্টফোন নিয়ে ঘুরছেএতো সুন্দর দুটি চোখ দিয়ে দেখে না, স্মার্টফোন দিয়ে দেখেনিজের চোখ দিয়ে দেখো, কতো সুন্দর পৃথিবী। কাজেই আমরা খুবই বিপদের মধ্যে আছি। যদি সতর্ক না হন, আজ থেকে পাঁচ বছর পরে ইয়াং জেনারেশনকে ফেলে দিয়ে একটা সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করে দেবে।

এই জনপ্রিয় লেখক আরো বলেন, আমাকে মানুষ হতে হবে। এই পৃথিবীটা চালাবেন তারাই যারা বই পড়েন। যারা বই পড়েন না তারা সমাজকে লিডারশিপ দেবেন না, দেশকে লিডারশিপ দিতে পারবেন না। শুধু তারাই পৃথিবী চালাবেন যারা বই পড়েন।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি। জীবনানন্দের সঙ্গে কোনোদিন দেখা হবে না, কিন্তু আমি তো ওনার সঙ্গে সময় কাটাই, তিনি গুন গুন করে আমার সঙ্গে কথা বলেনপৃথিবীর সমস্ত খ্যাতিমান আমার সঙ্গে কথা বলেন। কারণ, তাদের বই পড়ি। কাজেই আপনারা কেনো সময়টা নষ্ট করেন? পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের সঙ্গে সময় কাটান দেখেন কতো মজা, এভাবেই শেষ করেন তিনি বক্তব্য।

জনপ্রিয়