ঢাকা রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

চীনে কেন সবাই হন্যে হয়ে স্বর্ণ কিনছেন

আন্তর্জাতিক

বাণিজ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৭ মে ২০২৪

সর্বশেষ

চীনে কেন সবাই হন্যে হয়ে স্বর্ণ কিনছেন

স্বর্ণের প্রতি আকর্ষণ আবারও বেড়েছে। স্বর্ণের প্রতি এই আকর্ষণে চীনের নাগরিকেরাও পিছিয়ে নেই। ফলে বিশ্ববাজারে তর তর করে বাড়ছে স্বর্ণের দাম।

চীনা তরুণী লিনের উদাহরণ দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। বলা বলা হয়েছে, ২৫ বছর বয়সী এই নারী শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে ছোট দানা আকারের স্বর্ণ কিনছেন। স্বর্ণের গয়না, বার বা কয়েন কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর; অগত্যা স্বর্ণের দানা কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাঁকে। স্বর্ণের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, সেই দৌড়ে তিনিও সামর্থ্য অনুযায়ী শামিল হয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে লিন বলেছেন, ‘আমি আরও সঞ্চয় করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’

বৈশ্বিক ও জাতীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হচ্ছে স্বর্ণ। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গত বছরের শেষ দিকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এমনকি স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়; দাম এই পর্যায়ে বেশ কিছুদিনের জন্য থিতু হয়েছিল। এবার মূলত চীনের মানুষের স্বর্ণ কেনার হিড়িক পড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে এই ধাতুর দাম এভাবে বাড়ছে।

চীনের আবাসন খাতের অবস্থা ভালো নয়: ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটির আর্থিক খাত। এই বাস্তবতায় চীনের মানুষেরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকেছেন। চীনাদের এই স্বর্ণ কেনার হিড়িকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের রিজার্ভ বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক যে পর্যায়ে গেছে, তাতে মার্কিন বন্ড কেনা কমিয়ে দিয়েছে দেশটি; এমনকি আগের কেনা বন্ডও ছেড়ে দিচ্ছে তারা। আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো বিষয় হলো চীনের ফাটকাবাজদের তৎপরতা। তাঁরা বাজি ধরছেন, স্বর্ণের দাম আরও বৃদ্ধির সুযোগ আছে।

বৈশ্বিক স্বর্ণের বাজারে বরাবরই চীনের বড় প্রভাব আছে। এবার যে স্বর্ণ কেনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, তাতে চীনের প্রভাব আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যে সময়ে স্বর্ণের এই মূল্যবৃদ্ধি হলো, সেই সময় ঠিক স্বর্ণের দর বাড়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। এই সময়ে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বেড়েছে—বেড়েছে মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য। এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা সাধারণত মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের বিনিয়োগের জন্য হন্যে হয়ে ছোটেন; কিন্তু এবার তার মধ্যেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে।

গত মাসের শেষ দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে যে নীতি সুদহার এখন কমছে না। সেই সঙ্গে চলতি বছর ডলারের বিপরীতে বিশ্বের ১৫০টি মুদ্রার দরপতন হয়েছে; তা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।

স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪০০ ডলারে ওঠার পর আবার তা ২ হাজার ৩০০ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে ঠিকই; কিন্তু বাজারে এমন মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে যে স্বর্ণের দাম এখন আর অর্থনৈতিক শর্তের ওপর অতটা নির্ভর করে না, যতটা নির্ভর করে চীনের ভোক্তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর।

ধাতুবিষয়ক তথ্যের ভান্ডার মেটালস ডেইলি ডটকমের প্রধান নির্বাহী রস নরম্যান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘স্বর্ণের বাজারে প্রশ্নাতীতভাবে চীনই এখন চালিকা শক্তি।’ চীনের বাজারে স্বর্ণ কেনার গতি বরাবরই ছিল; কিন্তু এখন যেন প্রবল জলধারার মতো চীনের বাজারে স্বর্ণ ঢুকছে।

চায়না গোল্ড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বাজারে স্বর্ণের কেনাবেচা বেড়েছে ৬ শতাংশ। সংবাদে বলা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয় যে আগের বছর স্বর্ণের বাজারের প্রবৃদ্ধি কম ছিল। বরং মনে রাখা দরকার, আগের বছর চীনে স্বর্ণের বাজারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ।

চীনের মধ্যবিত্তের বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম আবাসন খাতের অবস্থা শোচনীয়। আবাসন খাতে বড় বড় বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। শেয়ারের সূচকও নিম্নমুখী। এ বাস্তবতায় চীনে যেসব বিনিয়োগ আসছে, তার মধ্যে অনেক বিনিয়োগই হচ্ছে স্বর্ণভিত্তিক তহবিলে। এ ছাড়া দেশটির তরুণেরা সামর্থ্য অনুসারে স্বর্ণের দানা কিনছেন।

চীনের অনলাইন বাজারে বিক্রেতারা স্বর্ণের দানা বিক্রিতে আগ্রাসী বিপণন চালাচ্ছেন। আলিবাবার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তাওবাওতে বিক্রেতারা লাইভ স্ট্রিম করে স্বর্ণ বিক্রি করছেন। ক্রেতারা বলছেন, মনে হতে পারে যে মানুষ কেবল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন; কিন্তু বাস্তবে এগুলো বিনিয়োগ।

দেশটির বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের রিজার্ভ বৃদ্ধি। গত মার্চ মাসেও স্বর্ণ কেনা হয়েছে। ফলে এ নিয়ে টানা ১৭ মাস স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়িয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি স্বর্ণ কিনেছে। গত ৫০ বছরে তারা আর কখনোই এত স্বর্ণের কেনেনি। তা সত্ত্বেও চীনের রিজার্ভে স্বর্ণের হার মাত্র ৪ দশমিক ৬, যেখানে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই অনুপাত দ্বিগুণ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতাও কমাচ্ছে তারা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চীন মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ কমাচ্ছে। গত মার্চ মাস পর্যন্ত চীনের হাতে ৭৭৫ বিলিয়ন বা ৭৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মার্কিন বিল ও বন্ড ছিল, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ এই সময় দেশটি ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ট্রেজারি বন্ড ছেড়ে দিয়েছে।

বেইজিংভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিওসি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ গুয়ান তাও নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, আগে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাজার থেকে রেনমিনবির বিনিময়ে স্বর্ণের কিনত; কিন্তু এবার তারা বিদেশি মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণের কিনছে। এর মধ্য দিয়ে তারা মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করছে।

চীনের তরুণী লিন বলেন, স্বর্ণের দানা কিনে ভালোই লাগছে তাঁর; আপাতদৃষ্টে মনে হয় যে এটা আর দশটা কেনাকাটার মতো; কিন্তু আদতে এটা একধরনের বিনিয়োগ। দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে, এটাই স্বাভাবিক। এখন যে দাম বাড়ছে, তা সীমার মধ্যে আছে বলেই তিনি মনে করেন।

জনপ্রিয়