
তন্ত্রমন্ত্র আর ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে মানুষের জটিল সব সমস্যার সমাধান করেন পীরবাবা। বিশেষ করে নারীদের সমস্যার সমাধানে নিজেকে সিদ্ধহস্ত দাবি করতেন ৬৫ বছর বয়সী পীরবাবা খ্যাত শাহজাহান আলী ফকির। এর মধ্য দিয়ে তার অসৎ উদ্দেশ্য আর ভণ্ডামি নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা ছিল। সম্প্রতি সেই কৌশলে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন তিনি।
অন্য অনেকের মতো পীরবাবা শাহজাহান আলী ফকিরকে বিশ্বাস করে স্ত্রীকে নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন দিনমজুর মোহাম্মদ রাজু। পীরবাবাকে দাদু বলে সম্বোধন করতেন তিনি। সেখানে পৌঁছার পর রাজুর স্ত্রীকে থেকে সরে যেতে বলেন পীরবাবা। সরল মনে স্ত্রীকে রেখে চলে আসেন রাজু। এই সুযোগেই ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন শাহজাহান আলী ফকির।
ধর্ষিত হলেও মান-সম্মানের ভয়ে প্রথমে ঘটনাটি স্বামীকে বলেননি রাজুর স্ত্রী। পরে স্বামীর পীড়াপীড়িতে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে ক্ষুব্ধ হন রাজু এবং কথিত পীরবাবাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পীরবাবার ঘরে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে পীরবাবাকে জবাই করে হত্যা করেন রাজু।
কথিত পীরবাবা শাহজাহান আলী ফকিরের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বামনগাছা গ্রামে। আর রাজুর বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। বামনগাছা গ্রামে গিয়ে পীরবাবাকে হত্যা করা হয় গত ২৮ মে। হত্যার কয়েকদিন পরও এর রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে ৫ জুন রাজুকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে সব তথ্য।
হত্যাকাণ্ডের পর শাহজাহান আলী ফকিরের মেয়ে মহেশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে পীরবাবাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন আসামি রাজু। পরে আদালতেও এ ব্যাপারে জবানবন্দি দেন।
কথিত পীরবাবা শাহজাহান আলী ফকিরকে হত্যার ব্যাপারে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানালেও অনেকেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সমালোচনা করেছেন।
মহেশপুর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রাজুকে ৫ মে বিকেলে উপজেলার খালিশপুর বাজার থেকে আটক করা হয়। পর দিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিয়াদ হাসানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি রাজু শাহাজাহান ফকিরকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন।