ঢাকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

প্রসঙ্গ ‘ক্লাইমেট স্মার্ট শিক্ষা’

মতামত

গুরুদাস ঢালী, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৯ মে ২০২৫

সর্বশেষ

প্রসঙ্গ ‘ক্লাইমেট স্মার্ট শিক্ষা’

পৃথিবী আজ বিপন্ন। নদী, সমুদ্র, পাহাড় সবকিছু যেনো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার কোনো শর্টকাট উপায় নেই।

শুধুমাত্র সঠিক শিক্ষাই পারে ক্রমশ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে। ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন হচ্ছে সেই শিক্ষা, যা আমাদের দেখায় কেবল তথ্য নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করার একটি দৃষ্টিভঙ্গি। 

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন আমাদের শেখায়, শুধু নিজেদের জন্য নয়, সারা পৃথিবী, পরিবেশ ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও পথ তৈরি করতে হবে। ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন তাই এক নতুন বাস্তবতা, এক নতুন আশার নাম।

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন একটি নতুন ধারার শিক্ষাগত পদ্ধতি, যার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা এবং শিক্ষার্থীদের জলবায়ু সহনশীল করে গড়ে তোলা। এটি এমন একটি সমন্বিত উদ্যোগ যা শিক্ষাব্যবস্থাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল, অভিযোজনক্ষম ও টেকসই করে তোলে।

জলবায়ুবিষয়ক জ্ঞান প্রদান, শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও সমাধান সম্পর্কে সচেতন করা, জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন শেখানো, কীভাবে স্থানীয়ভাবে অভিযোজন ও প্রশমনের কৌশল গ্রহণ করা যায়। যেমন-জল-সংরক্ষণ, পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি।

বিদ্যালয়ভিত্তিক জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, স্কুল বিল্ডিং ও পরিবেশকে জলবায়ু সহনশীলভাবে তৈরি বা রূপান্তর করা, যেমন-বন্যা সহনশীল স্কুল ভবন, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, পাঠ্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা।

কমিউনিটি সম্পৃক্ততা, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে জলবায়ু বিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা। জেন্ডার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, নারী, শিশু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সবার জন্য জলবায়ু বিষয়ক শিক্ষা নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা, দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধব আচরণ গড়ে তোলা, স্কুলভিত্তিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, টেকসই উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি, বিদ্যালয়ে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও জলবায়ু বিষয়ক ক্লাব গঠন করা। শিক্ষার্থীদের দিয়ে ‘জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করানো এবং বাস্তবায়নে যথাযথ সমন্বিত সহযোগিতা করা।

জলবায়ু পরিবর্তন বলতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনকে বোঝায়, যা প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও প্রধানত মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের, যেমন-জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন উজাড়, কার্বন ও মিথেন গ্যাস নিঃসরণ, ফলে ঘটে থাকে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি ‘গ্রিনহাউজ প্রভাব’-এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়।

কার্বনডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে থেকে সূর্যের তাপ শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তসরকারি প্যানেল অনুযায়ী, ২০৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা পূর্ব শিল্পযুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে, যদি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নেয়া হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে যেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। স্কুলে উপস্থিতি ও শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার, বন্যা, খরা বা ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বহু স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে, পরিবারের আয়ের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিশুরা কাজ করতে বাধ্য হয়, ফলে বিদ্যালয়ে যাওয়া কমে যায়, বিশেষ করে কন্যাশিশুরা ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

শিক্ষা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে স্কুল ভবন ভেঙে পড়ে বা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে বিদ্যালয়গুলোর নিরাপত্তাহীন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোযোগে প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিবার হারানো বা আশ্রয়হীনতার কারণে শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও মনোযোগহীনতা তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই মানসিক চাপ শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড় হাজারের বেশি স্কুল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। অনেক শিশুই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে ফিরতে পারেনি।

কেন শিক্ষা খাতকে জলবায়ু অভিযোজনের অংশ করতে হবে? জলবায়ু অভিযোজন বলতে বোঝায় এমন কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যা পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। শিক্ষাব্যবস্থাকে অভিযোজনমুখী করার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন, দক্ষ ও প্রস্তুত করতে হলে পাঠ্যক্রমে জলবায়ুবিষয়ক জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। শিক্ষার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জীবনধারা, টেকসই কৃষি, জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব।

স্কুলের ডিআরআর (ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন) কার্যক্রম শিশুদের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়কেও সচেতন করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থায় জলবায়ু-সংবেদনশীলদৃষ্টি ভঙ্গি গ্রহণ করলে নারীরা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিশুরা দুর্যোগকালীন সহায়তা ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষা একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। একটি কার্যকর ক্লাইমেট স্মার্ট সমাজ গঠনে শিক্ষাব্যবস্থাকে অভিযোজনমুখী, সহনশীল এবং কার্যকর করে তুলতে হবে। এজন্য শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন মানসিক প্রস্তুতি, সচেতনতা ও টেকসই চিন্তাভাবনার বিকাশ, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন (জলবায়ু স্মার্ট শিক্ষা) হলো এমন একটি শিক্ষাগত পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এর প্রতিক্রিয়া, অভিযোজন এবং প্রশমন কৌশল সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং শিক্ষাখাতকে জলবায়ু-সহনশীল করে গড়ে তোলে।

এটি শুধু শিক্ষার বিষয়বস্তু নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার একটি বিস্তৃত রূপান্তর প্রক্রিয়া। সহজভাবে বললে, ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন মানে হলো এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যা জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম, পরিবেশবান্ধব আচরণ গড়ে তোলে, এবং শিক্ষাখাতকে দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত করে।

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য চারটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবিষয়বস্তু; পাঠ্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান, পরিবেশ রক্ষা, নবায়নযোগ্য শক্তি, টেকসই কৃষি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। শিশুদের বয়স উপযোগী উপায়ে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক জ্ঞান প্রদান। কল্পনা, সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা গড়ে তোলার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা।

জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো; স্কুল বিল্ডিংকে দুর্যোগ প্রতিরোধী করে তোলা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা চালু করা। বিদ্যালয়কে ‘গ্রিন ক্যাম্পাস’ হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি শিক্ষকদের জলবায়ু বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান। টিচিং মেথডে পরিবেশগত চেতনা ও সমস্যা নিরসনের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা।

শিক্ষকদের নেতৃত্বে পরিবেশ ক্লাব গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা। শিক্ষা পরিচালনা ও নীতিগত নির্দেশনা; জাতীয় শিক্ষানীতিতে জলবায়ু অভিযোজন ও টেকসই শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয় পরিকল্পনা। স্কুল, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার সমন্বিত পরিকল্পনা।

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন হলো সময়োপযোগী, কার্যকর ও ভবিষ্যতমুখী একটি শিক্ষাগত রূপান্তর। এটি শুধু পরিবেশ সম্পর্কে জানায় না, বরং শিক্ষার্থীদের পরিবেশের জন্য কাজ করার নৈতিকতা ও দক্ষতা গড়ে তোলে। অন্যান্য শিক্ষা মডেলের তুলনায় এটি অধিক সমন্বিত, ব্যবহারিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। শিক্ষাখাতকে জলবায়ু সহনশীল করার জন্য এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

যদিও উদ্যোগ অনেক, তবুও ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন বাস্তবায়নে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। বাজেটে শিক্ষাখাতে জলবায়ু অভিযোজন বরাদ্দ অপ্রতুল। অধিকাংশ শিক্ষক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়গুলো শেখাতে প্রস্তুত নন।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক সংখ্যায় খুবই কম। অনেক অভিভাবক ও কমিউনিটি সদস্য শিক্ষাকে এখনো শুধুই ‘পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান’ হিসেবে দেখে। জলবায়ু পরিবর্তনকে শিক্ষার অংশ হিসেবে নেয়ার মানসিক প্রস্তুতি কম। শিক্ষা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় দুর্বল। অনেক নীতিমালা থাকলেও তা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ হয় না।

বাংলাদেশের উপকূলীয়, নদীভাঙনপ্রবণ ও পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে। কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল ও সমস্যা এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক শিশু দীর্ঘ সময় শিক্ষার বাইরে থাকে।

নদীভাঙনপ্রবণ অঞ্চলে স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, স্থায়ী স্থাপনার অভাব। শিশুদের স্কুলে যাওয়া ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। হাওর ও পাহাড়ি এলাকায় বর্ষায় পানিবন্দি হওয়া, পাহাড়ধসে স্কুল ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি। পড়াশোনায় দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা শিক্ষার মান কমিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন বাস্তবায়নে ইতিবাচক, তবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে এখনো বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে শক্তিশালী সমন্বয়, বাজেট বৃদ্ধি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এই প্রয়াসকে সফল করতে পারে। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ করে শিশুদের জন্য শিক্ষা নিরাপদ ও সহনশীল করতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিকে মোকাবিলা করতে শিক্ষাব্যবস্থাকে অভিযোজনক্ষম ও টেকসই করে গড়ে তোলার জন্য শুধু নীতিমালা নয়, বাস্তবভিত্তিক কৌশল, উদ্ভাবন ও গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।

সব স্তরের শিক্ষাক্রমে বয়সভিত্তিক জলবায়ু শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা। ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’, ‘নবায়নযোগ্য শক্তি’, ‘জলবায়ু ন্যায্যতা’, ‘টেকসই জীবনধারা’ বিষয়ে পাঠ অন্তর্ভুক্তি। বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিবেশ শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে জলবায়ু ন্যায্যতা ও মানবিক প্রভাব বিষয়গুলোর সংমিশ্রণ। বাস্তবভিত্তিক শেখা। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে শিশুদের উপযোগী ডিজিটাল গেম, অ্যানিমেশন ও ইন্টারেক্টিভ লার্নিং টুল।

শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পরিবেশ আন্দোলন/ক্লাব গঠন; প্রতিটি স্কুলে ‘পরিবেশ ও জলবায়ু ক্লাব’ গঠন। নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম তথা দেয়ালিকা, বৃক্ষরোপণ, র‍্যালি, পোস্টার মেকিং, ক্লাইমেট লিডার তৈরি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি; যারা স্কুল ও কমিউনিটিতে পরিবেশগত সিদ্ধান্তে অংশ নেবে। ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’, ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস’ স্কুলভিত্তিক উদযাপন করে সচেতনতা তৈরি। স্কুল ব্যবস্থাপনায় অভিভাবক, স্থানীয় প্রতিনিধি, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে আগ্রহী সদস্যদের যুক্ত করা।

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা মোকাবিলায় সচেতনতা এবং প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যৌথভাবে বাগান পরিচালনা, যেখানে পানি সংরক্ষণ ও টেকসই চাষাবাদ চর্চা করা হয়। দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয় ব্যবহারের মাধ্যমে স্কুলের প্রতি কমিউনিটির আস্থা বাড়ানো।

ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশনকে শুধু তাত্ত্বিক পাঠদানে সীমাবদ্ধ না রেখে একে বাস্তব ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটে অভিযোজনযোগ্য করে তোলার জন্য এই কৌশল ও উদ্যোগগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিক্ষাক্রম থেকে শুরু করে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ ও কমিউনিটি সংযোগ সবগুলো মিলিয়ে একটি জলবায়ু সহনশীল শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

এই রূপান্তর শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা নয়, বরং পরিবর্তনের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও তৈরি করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রতিনিয়ত জটিলতর হচ্ছে। আমাদের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে ভবিষ্যতের জন্য সুসংহত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও তথ্যনির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সত্যি বলতে কী, ক্লাইমেট স্মার্ট এডুকেশন কোনো কৌশল নয়, এ এক নীরব বিপ্লব। যে বিপ্লব শুরু হয় শিশুর মনে, বিস্তার ঘটে সমাজে, এবং প্রতিধ্বনিত হয় বিশ্বজুড়ে। এ শিক্ষা আমাদের বলে দেয়, পৃথিবী আমরা ধ্বংস করেছি জ্ঞানের অভাবে, সেই পৃথিবীই আবার গড়া যাবে জ্ঞানের মাধ্যমেই।

লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত

 

জনপ্রিয়