ঢাকা রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

স্কুলে সহিংসতা বাড়ছে জার্মানিতে

শিক্ষা

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩০, ৭ মে ২০২৪

সর্বশেষ

স্কুলে সহিংসতা বাড়ছে জার্মানিতে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জার্মানির স্কুলগুলো থেকে সহিংসতাসহ নেতিবাচক সংবাদ আসা বেড়েই চলেছে৷ যা জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে৷

জরিপ বলছে, শিক্ষার্থীরা নিজেদের চাকরি খুঁজে পাওয়া ও বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে মনে করছেন না। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে, পিআইএসএ শিক্ষা র‌্যাঙ্কিংয়ে জার্মান ছাত্রদের গণিত ও পড়ায় পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে৷ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ইয়ুথ স্টাডির জরিপ অনুসারে, স্কুলগুলোতে ডিজিটালাইজেশনেরও যথেষ্ট ঘাটতি দেখা গেছে৷ সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চাকরি খুঁজে পাওয়া ও বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে মনে করছেন না৷

 

শুলবারোমিটার (স্কুল ব্যারোমিটার) নামে পরিচিত সংস্থার এপ্রিলে পরিচালিত সমীক্ষায় পাওয়া গেছে আরও উদ্বেগজনক ফলাফল৷ সেখানে উঠে আসে, প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের কাছ থেকে মানসিক বা শারীরিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন।

জরিপের জন্য এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা রবার্ট বশ ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষণার প্রধান ডাগমার ওল্ফ বলেন, আমরা একটি অসুস্থ ব্যবস্থার একটি খণ্ড চিত্র দেখছি৷

তিনি বলেন, আমরা উৎপীড়নের কথা বলছি, আমরা ভাঙচুরের কথা বলছি, তবে শারীরিক সংঘর্ষের কথাও বলছি, যার মধ্যে কিছু স্কুল সীমানার বাইরে পর্যন্ত চলে যায়৷

তিনি আরও বলেন, আমরা অভিভাবকদের জড়িত থাকার খবরও পেয়েছি। এটি অস্বাভাবিকের চেয়েও বেশি, তবে এমন নয় যে এটা আগে ঘটেনি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সহিংসতা

সম্প্রতি ‘জাতীয় ধর্ষণ দিবসে' অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে টিকটকে ভাইরাল হওয়া একটি মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য বার্লিনের শিক্ষামন্ত্রীকে আটশ বিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করতে হয়েছিল৷

ভূ-রাজনৈতিক সংকট ও যুদ্ধেরও প্রভাব রয়েছে এতে৷ ওল্ফের মতে, স্কুল প্রশাসকেরা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতা দেখেছেন৷ এটি যে শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেই হচ্ছে তা নয়৷ এমনকি ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও উৎপীড়ন ও হাতাহাতির ঘটনা বেড়েছে৷

শরণার্থীদের একীভূত করা জার্মানির স্কুলগুলোর জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ডাগমার ওল্ফ বলেন, গত দুই বছরে, আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা দুই লাখেরও বেশি শিশুকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছি৷ এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা যেখানে বড় অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে বা গৃহযুদ্ধ রয়েছে সেখানকারও শিক্ষার্থী রয়েছেন৷ অবশ্যই, এটি পরিস্থিতিকে ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও৷

স্মার্টফোন, কোভিড-১৯ নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে

টরস্টেন মুলার (ছদ্মনাম) জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার একটি নামকরা স্কুলের একজন সমাজকর্মী৷ তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে৷ তিনি শিক্ষার্থীদের চাপ, ক্লান্তি, অবসাদ বাড়ার জন্য স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকে দায়ী করেছেন৷

তিনি বলেন, এটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে৷ তরুণরা নিজেদের চেয়ে অন্যের সম্পর্কে বেশি কথা বলে এবং যে কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়৷ এছাড়া আমরা এখনও করোনভাইরাস মহামারির পরবর্তী প্রভাবগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করছি৷ যা মানসিক অসুস্থতার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে৷

কোভিড-১৯ মহামারির সময় কয়েক মাস ধরে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা সবচেয়ে বড় ভুল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে৷ সেসময় জার্মান ছাত্রদের ১৮০ দিনেরও বেশি সময় বাড়িতে থাকতে হয়েছিল, যা অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক বেশি৷

প্রয়োজন আরও মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী

মুলার মনে করেন, জার্মানির স্কুলগুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ছোট ক্লাস, পর্যাপ্ত শিক্ষক, সমাজকর্মী ও মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা প্রয়োজন৷

কিন্তু জার্মান শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্টেফান ডুল আরও ভালো কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, মনোবিজ্ঞানী, প্রশাসনিক সহকারী ও যুব কর্মীদের পাশাপাশি আমাদের এমন অনেক লোক দরকার যারা জার্মান শেখাতে পারে৷ কিন্তু আমরা চাইলেই সহজে নিয়োগ করতে পারি না৷ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু শ্রমশক্তি কমে যাচ্ছে৷ এভাবে পুরো ব্যবস্থা চলতে পারে না৷

এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে৷ তাদের শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর চেয়ে দ্বন্দ্ব অবসানে মধ্যস্থতা করতে হচ্ছে বেশি৷ ‘স্কুল ব্যারোমিটার' এর জরিপ অনুসারে, তিনজনের মধ্যে একজন শিক্ষক প্রায়শই আবেগগতভাবে ক্লান্ত বোধ করেন এবং ২৭ শতাংশ বলেছেন যে তারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবেছেন৷ তাদের সবার কাছেই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল শিক্ষার্থীদের আচরণ৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

 

জনপ্রিয়