নতুন শিক্ষাক্রমের অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী প্রাণী হলেও ডিম পাড়ে।’ এ তথ্যটি ভুল। কারণ প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী। একই বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘হাইড্রোজেন ও পানির বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়’। কিন্তু হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। এ রকম ১৪৭টি ভুল ধরা পড়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১টি বইয়ে। এরই মধ্যে ভুলগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি। সুপারিশের কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে রয়েছে।
গত ৩৫ বছরের মতো এবারও ক্লাস শুরুর পর পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। এর আগে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮ ভুল, ৫৮টি অসংগতি চিহ্নিত করে। পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের ভুল-অসংগতির সংশোধনী দেয় এনসিটিবি।
এনব ভুল প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতিটি বইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁরা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এনসিটিবির উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেন। সম্প্রতি এই কমিটি থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১ বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভুলগুলোর সংশোধনী দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সুপারিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি, অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি, সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি, ষষ্ঠ শ্রেণির ৫ বইয়ে ১০টি ভুল রয়েছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো বাক্য পুরোপুরি সংশোধনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, এবার পাঁচটি পদ্ধতিতে বইগুলোর ভুলত্রুটি ও অসংগতি বের করা হয়েছে। সংশোধনীগুলো শিগগিরই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। পরে শ্রেণিশিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে এই ভুল ও অসংগতিগুলোর সংশোধন নিশ্চিত করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, পাঠ্যবইয়ে যেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, সেগুলোর একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে সংশোধন-সংযোজন নিশ্চিত করবেন।