
বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রিলেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নতুন শিক্ষকদের আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষককেই যোগদান করাতে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সভাপতি ঘুষ চান বা অনৈতিক সুবিধা দাবি করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে বলা হয়, ঘূষ না দিলে নতুন শিক্ষককে যোগদান করতে দেয়া হবে না। তবে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষককে যোগদান করতে না দিলে ফেঁসে যাবেন সভাপতি। যোগদানে বাধা দিলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ব্যবস্থা নেয়া হবে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেও। বিদ্যমান এমপিও নীতিমালায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।
গত বুধবার গভীর রাতে ২৭ হাজার ৭৪ জন নতুন শিক্ষককে চূড়ান্ত সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নতুন শিক্ষকরা সবাই এমপিওভুক্ত পদে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। বিভিন্ন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ১৩ হাজার ৭০৫ জন এবং মাদরাসা ও কারিগরিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ১৩ হাজার ৩৬৯ জন নতুন শিক্ষককে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এনটিআরসিএ সুপারিশ পেয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ১৩ হাজার ৭০৫ জন নতুন শিক্ষক যোগদানের মাস থেকেই বেতন বা এমপিও পাবেন। স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালার এ নির্দেশনা রয়েছে। তবে মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষকরা যোগদান থেকে বেতন পাবেন না। মাদরাসা ও কারিগরির এমপিও নীতিমালায় এ ধরনের কোনো ঘোষণা এখনো পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এদিকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৮০ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ২৭ হাজার ৭৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ৫ হাজার ৪০৬ জন প্রার্থী চূড়ান্ত সুপারিশ পাননি।
এদিকে সুপারিশে পেয়েও অনেক প্রার্থী পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন, তাই সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারছেন না। এ ধরনের র প্রার্থীদের এনটিআরসিএর কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
যোগদানে বাধা দিলেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধ, কমিটি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন জারি করা বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর ১৮ এর (ঘ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এনটিআরসিএতে শিক্ষক চাহিদা দিলে ওই পদে মনোনীত (সুপারিশপ্রাপ্ত) প্রার্থীকে নিয়োগ (যোগদান করতে) দিতে হবে। প্যাটার্নের অতিরিক্ত চাহিদা দিলে ওই শিক্ষক কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাহ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে এবং পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যোগদান থেকেই বেতন পাবেন সাড়ে ১৩ হাজার নতুন শিক্ষক বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে যোগদান করবেন ২৭ হাজার ৭৪ জন নতুন শিক্ষক। তাদের মধ্যে কলেজ ও স্কুলে ১৩ হাজার ৭০৫, মাদরাসায় ১১ হাজার ২৭৯, কারিগরিতে ৫১৬, সংযুক্ত স্কুলে ১ হাজার ৫৮৩, সংযুক্ত মাদরাসায় ৬২১ জন প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ বেসরকারি স্কুল-কলেজের নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর ১৭.৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এমপিও পদে যোগদানকৃত শিক্ষক-প্রদর্শকের একাডেমিক সার্টিফিকেট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নিবন্ধন ও সুপারিশ যথাযথ থাকলে এবং অতীতে অপরাধমূলক বা বিরূপ কোনো রেকর্ড না থাকলে ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে তাদের এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানপত্র গৃহীতের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায় যোগদান থেকে বেতনের ঘোষণা থাকলেও মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালায় এ ঘোষণা আসেনি। তাই মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষকরা যোগদান থেকে বেতনের সুবিধা পাবেন না।
এর আগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যোগদান করা শিক্ষকরা যোগদানের মাস থেকেই বেতন পেয়েছেন। যাদের এমপিওর আবেদন করতে কয়েকমাস সময় লেগেছিলো তারাও বকেয়ার আবেদন করে যোগদান থেকে বেতন পেয়েছিলেন।
যে কারণে বাদ সাড়ে ৫ হাজার নির্বাচিত প্রার্ধী
এনটিআরসিএ জানিয়েছে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েও ৫ হাজার ৪০৬ জন প্রার্থী চূড়ান্ত সুপারিশ পাননি। তাদের ৩ হাজার ৬০৭ জন ভি-রোল ফরম পূরণ করে পাঠাননি। অবশিষ্ট ১ হাজার ৭৯৯ প্রার্থীকে জাল সনদ, কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা, বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করা, নিবন্ধন সনদ না থাকা সত্ত্বেও ভুল পদে আবেদন করা, মামলার স্থগিতাদেশ থাকা ইত্যাদি কারণে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি।
পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে এনটিআরসিএতে যোগাযোগের পরামর্শ:
যেসব প্রার্থী পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়ে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারছেন তাদের এনটিআরসিএ কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বহু প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণে ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড দিলে লগইন করে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন। তবে, ওইসব প্রার্থীকে আবেদন করার সময় যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছিলেন ওই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। তাহলে তারা লগইন করতে পারবেন। আর যদি কোনো প্রার্থী তা ভুলে যান সে ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তার তথ্য জেনে টেলিটক থেকে তার পাসওয়ার্ড আমরা তাকে সংগ্রহ করে দেবো। পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত জটিলতায় প্রার্থীদের এনটিআরসিএতে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নতুন শিক্ষকদের ৮ হাজার ৮৮২ জন নারী
এনটিআরসিএ জানিয়েছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৮০ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ২৭ হাজার ৭৪জন প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। কলেজ ও স্কুলে ১৩ হাজার ৭০৫, মাদরাসায় ১১ হাজার ২৭৯, কারিগরিতে ৫১৬, সংযুক্ত স্কুলে ১ হাজার ৫৮৩, সংযুক্ত মাদরাসায় ৬২১ জন প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ৩ হাজার ৬০৭জন পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ভিআর ফরম দাখিল না করায় এবং অবশিষ্ট ১ হাজার ৭৯৯ জনের মধ্যে জাল সনদ পাওয়া, কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা, বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করা, নিবন্ধন সনদ না থাকা সত্ত্বেও ভুল পদে আবেদন করা, মামলার স্থগিতাদেশ থাকা ইত্যাদি কারণে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়নি। সুপারিশকৃত ২৭ হাজার ৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ১৯২, মহিলা ৮ হাজার ৮৮২। মহিলা কোটায় নির্বাচিত ৬ হাজার ১৭৬ জন।