ঢাকা সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪ , ১৯ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

গুলিস্তানে বিস্ফোরণ

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন মানতে নারাজ তিতাস

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ১৭ মার্চ ২০২৩

সর্বশেষ

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন মানতে নারাজ তিতাস

রাজধানীর বংশাল থানার সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচে ছিল গ্যাসের লাইন। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন না থাকায় লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমা হয়। সেই গ্যাস থেকেই শর্টসার্কিট বা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে হয় বিস্ফোরণের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি জানায় এমন তথ্য। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকা বা অবৈধ গ্যাসলাইন ও পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন না থাকার বিষয়ে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে চায় না তিতাস। নতুন করে কিছু না বলতে চাইলেও বিস্ফোরণের পাঁচদিন পর ১২ মার্চ সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল ওই ভবন পরিদর্শন করে। তখন তিতাসের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং দক্ষিণ) শামসুদ্দিন আল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, তিতাসের গ্যাস থেকে ভবনে বিস্ফোরণ হয়নি। আমরা এখনো গ্যাসের আলামত পাইনি। এ দুর্ঘটনা প্রাকৃতিক গ্যাস সৃষ্ট নয়।

ঘটনার পরদিনই ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

এর আগে কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন লিখিত আকারে আমরা জমা দেবো। সেখানে বিস্তারিত সব কিছু লেখা থাকবে।

তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরিত ভবনের নিচে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গ্যাসের লিকেজ ছাড়া বিস্ফোরণের অন্য কোনো আশঙ্কা নেই। নাশকতার কিছুই নেই। আমরা যেটা দেখেছি সেটা আগেও বলেছি। আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।’

‘সেখানে ভেন্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে এ বিস্ফোরণ হয়। ভেন্টিলেশন কম থাকার কারণেই গ্যাস জমে থাকে। বাতাসের সঙ্গে সংমিশ্রণে মিথেন বা বিষাক্ত কিছু (গ্যাস) হয়েছিল। ফলে শর্টসার্কিট না সিগারেটের কারণে সেখানে বিস্ফোরণটা ঘটেছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ব্যাপারে বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞরা আরও ভালো বলতে পারবেন। আমরা গ্যাস বিস্ফোরণের কারণ পাচ্ছি। অন্য কিছু পাইনি।’

এদিকে গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকা বা অবৈধ গ্যাস লাইন ও পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন করে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাননি তিতাস গ্যাসের মেট্রো-২ এর আবাসিক ম্যানেজার প্রকৌশলী মশিউর রহমান। অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

ঘটনার পর বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটও। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বলেন, ভবনের কিছু জায়গা আমরা সোয়াভিং করেছি। ঘটনাস্থলে কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য বা মিথেন গ্যাস ছিল কি না তা জানতে আলামত নেওয়া হয়েছে। আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো বিধি মোতাবেক পরীক্ষা করার পর বিশেষজ্ঞরা জানাতে পারবেন আসলে কেন বিস্ফোরণটা হয়েছে। আমাদের কাজ ছিল আলামতগুলো ভালোভাবে সংগ্রহ করা। প্রয়োজনে আরও আলামত সংগ্রহ করা লাগতে পারে।

সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজউক। এরই মধ্যে ভবনটির বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলো সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রপিং করা, ভবনটির সামনের সড়কের একাংশ দিয়ে হালকা যান চলাচল, ৪৫ দিনের মধ্যে ভবনটির ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করা, ডিইএ ও রেট্রোফিটিং- এ দুই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি বসবাস বা ব্যবহার না করা এবং সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ভবনটি ব্যবহার করা যাবে। তবে বিস্ফোরণের কারণ উল্লেখ ছিল না এ তদন্ত কমিটিতে।

ভবনের বিষয়ে রাজউকের তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, অন্তত ৪৫ দিন পর জানা যাবে ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত কি না। এরই মধ্যে আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। ভবনটির ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করার পর আরও জানা যাবে।

বিস্ফোরণের পর রাজউক ভবনের নকশা খুঁজে পাচ্ছিল না। নকশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির মালিকের কাছ থেকে ভবনটির নকশা মিলেছে। বিল্ডিং কোড মেনে করেছে কি না সেটা নকশায় থাকে না। ভবনটির ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্টের (ডিইএ) পর জানা যাবে বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি না। আর আমাদের দেশে বিল্ডিং কোড হওয়ার আগে এ ভবন অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। ভবনটি বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে পাঁচ তলার অনুমোদন ছিল।

বিস্ফোরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ২৪টি কলামের ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি কলাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। রাজউকের তদন্ত কমিটির সুপারিশের পর গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল থেকেই ভবনটির সামনের সড়কের দুটি লেন দিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বেরিয়ার দিয়ে রাখা হয়েছে ভবনের সামনের অংশ। ভবনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। তবে ভবনটি ঝুঁকিতে থাকায় এখনো ভবনের বেজমেন্টে উদ্ধারকাজ চালাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে গত ৭ মার্চ বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে ভবনটিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। তাদের মধ্যে এখনো বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও তার ভাই মতিউর রহমান এবং ভবনের বেজমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মিন্টু কারাগারে।

জনপ্রিয়