ঢাকা রোববার, ০৫ মে ২০২৪ , ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন

বিখ্যাত গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের আজ মৃত্যুবার্ষিকী। রামানুজন ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর ভারতের মাদ্রাজে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শ্রীনিবাস ইয়োঙ্গার ছিলেন শহরের একটি কাপড়ের দোকানের হিসাব রক্ষক। মা ইরোদ ছিলেন গৃহিণী।

রামানুজন খুব অল্প সময় বাঁচলেও তিনি গণিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তার রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি থেকে পরবর্তীতে আরো অনেক নতুন সমাধান পাওয়া গেছে। রামানুজন ১০ বছর বয়সে গণিতের সঙ্গে পরিচিত হন। পাঁচ বছর বয়সে তাকে পাড়ার পাঠশালায় ভর্তি করা হয়।

রামানুজন সাধারণত কম কথা বলতেন এবং মনে হতো তিনি কিছুটা ধ্যানমগ্ন থাকতেন। তার অসাধারণ প্রতিভা স্কুল কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে এবং প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বৃত্তি দেয়া হয়।

অঙ্কে বরাবরই প্রবল উৎসাহ থাকলেও বাকি বিষয়গুলোতে সেভাবে নজর না দেয়ার জেরে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে কুম্বাকোনাম গর্ভমেন্ট কলেজের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে রামানুজন পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করা শুরু করেন, যেখানে তার সহকর্মীরা উপলব্ধি করেন ম্যাথেমেটিক্স জিনিয়াসের দক্ষতা। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুযোগ পান লন্ডন ম্যাথেমেটিক্স সোসাইটিতে। ঠিক পরের বছরই এপিলিপটিক ফাঙ্কশানস অ্যান্ড থিওরি অব নম্বর নিয়ে তার রিসার্চের সুবাদে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘দ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’ সিনেমায় রামানুজনের জীবনযাত্রা ও অঙ্কের জগতে তার অনন্য অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

রামানুজন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বিভিন্ন গাণিতিক উপপাদ্য, গণিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি পাই ও দুই-এর বর্গমূল-এর মান যেকোনো সংখ্যক দশমিক স্থান পর্যন্ত বলতে পারতেন।

প্রথমে নিজের এই অদ্ভুত প্রতিভার বিচার তিনি নিজেই করতে পারেননি। তার এক বন্ধু তাকে  জি.এস কারের লেখা ‘সিনপসিস অব এলিম্যান্টরি রেজাল্ট ইন পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথাম্যাটিক্স’ বইটি পড়তে দেন। মূলত এই বইটি পড়েই তার গাণিতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করে।

এই বইয়ের প্রদত্ত বিভিন্ন গাণিতিক সূত্রগুলোর সত্যতা রামানুজ পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি ম্যাজিক স্কোয়ার গঠনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বৃত্তের বর্গ সম্পর্কীত তার গবেষণা পৃথিবীর বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জ্যামিতির সীমাবদ্ধতা দেখে তিনি শুরু করেন বীজগণিত বিষয়ে গবেষণা ।

কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জি এইচ হার্ডির আমন্ত্রণে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং তার সঙ্গে গবেষণার সুযোগ পান। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে রামানুজান বিয়ে করেন। কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকাতে তিনি স্বভাববিরুদ্ধ নানা কাজের সন্ধান করতেন। তাই তার নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করারও সৌভাগ্য হয়নি।

ইংল্যান্ড যাওয়ার পর জীবনের বাকি দিনগুলো তিনি স্বস্তিতে কাজ করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তকালে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ভর্তি করা হয় কেমব্রিজের একটি নার্সিং হোমে। কিন্তু এরপর তিনি আর কখনো সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রামানুজনের উদ্ভাবনসমূহ ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ। গণিতে তার মতো গবেষক  উপমহাদেশে আর আসেননি। এই বিস্ময়কর প্রতিভাবান গণিতবিদ অল্পদিন বেঁচে থাকলেও তার কাজের পরিধি ছিলো বিস্তর। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি তাকে ‘গণিতবিদদের গণিতবিদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
 

জনপ্রিয়