ঢাকা বুধবার, ২৮ মে ২০২৫ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

গ্যাস সংকটে মিল-কারখানাগুলো প্রায় অচল

অর্থনীতি

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ২৬ মে ২০২৫

আপডেট: ১২:৫৮, ২৬ মে ২০২৫

সর্বশেষ

গ্যাস সংকটে মিল-কারখানাগুলো প্রায় অচল

দেশের অন্যতম রপ্তানিনির্ভর খাত টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। উৎপাদনের মূল নিয়ামক গ্যাসের মারাত্মক ঘাটতিতে মিল-কারখানাগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। উৎপাদন সক্ষমতা হারিয়ে ক্রমেই ক্ষতির বৃত্তে আটকে পড়ছে শিল্পোদ্যোক্তারা। 

তৈরি পোশাক খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর দাবি, পরিস্থিতি যদি দ্রুত সামাল না দেওয়া যায় তাহলে এসব খাতের বিনিয়োগ ধ্বংস হয়ে যাবে। গ্যাস-সংকটে পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। চলতি মূলধন সংকুচিত হয়েছে।  

এই সংকটময় প্রেক্ষাপটে গতকাল রবিবার গুলশান ক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প ও ব্যাবসায়িক সংগঠনগুলোর নেতারা। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিসিআই, আইসিসিবি এবং বিপিজিএমইএ। সম্মেলনে বক্তারা দেশের সামগ্রিক শিল্পনীতি ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাকে 'শিল্পবিরোধী' আখ্যা দেন। 

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, 'শিল্পবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের গলা টিপে মারা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদেরও শেষ করে দেওয়া হবে। 

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, 'আগামী ঈদে অনেক কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারবে না।, শুধু গ্যাস নয়, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ, বিদ্যুৎ সংকট, মুদ্রানীতির অসংগতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংকট মিলিয়ে বর্তমান শিল্প খাতের সামনে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। 

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাস-সংকট যেন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিটিএমএর দাবি, গ্যাসের অভাবে বহু কারখানায় উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। পোশাক প্রস্তুতকারীরা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে বিমানে চালান পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রতিটি চালানে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

গ্যাসের অভাবে অনেক মিল-কারখানা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে। এতে করে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত কয়েক বছরে ৩০০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। শিল্পকারখানাগুলোকে সিকিউরিটি বাবদ বাড়তি অর্থও দিতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সার উৎপাদনের অজুহাতে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির নেটওয়ার্কেই প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ইভিসি মিটার না থাকায় প্রকৃত ব্যবহারের পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে সিস্টেম লসের অজুহাতে শিল্প খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকুচিত হয়ে পড়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে যেমন আর্থিক খাতে নতুন চাপ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, নিয়মিত বেতন না পেলে শ্রমিক অসন্তোষও তৈরি হতে পারে। 

তারা বলেন, বর্তমানে দেশের অনেক টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। নতুন কোনো নিয়োগ হচ্ছে না। উৎপাদন না থাকলে কর্মসংস্থানও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এই খাতেই দেশের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা বলেন, টেক্সটাইল খাত দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ জোগান দেয়। এই খাত মার খেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ধস নামবে। সরকার যেখানে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে ব্যস্ত, সেখানে রপ্তানি আয় কমে গেলে সামষ্টিক অর্থনীতি আরো চাপে পড়বে। তাছাড়া এই খাতের ওপর নির্ভরশীল দেশের লাখো পরিবার বিপন্ন হয়ে পড়বে। 

বক্তারা আরো বলেন, বৈশ্বিক জিওপলিটিক্স ও ট্যারিফ যুদ্ধে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন স্থান পরিবর্তনের কথা ভাবছে। এই সুযোগে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু গ্যাস-সংকট, ব্যাংকিং অনিশ্চয়তা ও নীতিগত অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এখন পিছিয়ে আসছেন। ফলে সম্ভাবনার এই দ্বারও প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

বক্তারা উল্লেখ করেন, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গঠিত বর্তমান সরকারের কাছে একাধিকবার পত্র দেওয়া হলেও বাস্তব কোনো সমাধান হয়নি। বরং নতুন করে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরো সংকটাপন্ন করেছে। 

শিল্প খাতের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে তা হলো-অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা। শিল্প খাতের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি টেকসই মূল্যনীতির প্রণয়ন ও গ্যাস-সংকট মোকাবিলায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। এছাড়াও সিস্টেম লস বন্ধ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ভ্যাট প্রত্যাহার এবং পেট্রোবাংলা-বিইআরসি-তিতাসকে মুনাফা না করে জনস্বার্থে কাজ করার দাবি জানানো হয়েছে।

জনপ্রিয়