ঢাকা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ , ২০ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিও ফাঁস

শিক্ষা

আমাদের বার্তা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:৩০, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিও ফাঁস

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ফল জালিয়াতির আলামত নষ্ট করা সম্পর্কিত অডিয়ো রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। গত মঙ্গলবার কম্পিউটার শাখায় দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা আবদুর রহমান নামে একজনের ওই অডিয়ো রেকর্কে বড় ধরনের অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডটির বিরুদ্ধে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসির ফল জালিয়াতির অভিযোগ আরো স্পষ্ট হলো। 

ওই অডিয়ো রেকর্ডে বলা হয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল আশানুর মোল্লা (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অফিস পিয়ন) আমাকে ফোন দিয়ে কম্পিউটার শাখায় যাওয়ার জন্য বলেন। এটা স্যারের অর্ডার। আমি আশানুরের কাছে গেলে আমাকে কম্পিউটার শাখায় যাওয়ার জন্য বলা হয়। ২০২৩-এর এইচএসসির খাতার নির্দিষ্ট বান্ডিল বের করার জন্য বললে আমি বের করি। এই নির্দেশ প্রোগ্রামার আবদুল মালেক দেন।  

অডিয়োতে আরও বলা হয়, ১৬ এপ্রিল কিছু ও ১৭ এপ্রিল কিছু বান্ডিল বের করা হয়। এরপর বান্ডিলগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে নিচের গোডাউনের সামনে থেকে খালি খাতা ও খালি ওএমআর সিট নিয়ে যাওয়া হয় আবদুল মালেকের নির্দেশে। এগুলো নিয়ে যাওয়ার পর বোর্ডে কাজ করা তিন কর্মচারী নোমান, রায়হান ও শিবলুকে দিয়ে বৃত্ত ভরাট করা হয়। এরপর নতুন খাতাগুলো বান্ডিলে রেখে পুরাতনগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। 

অডিয়োতে আবদুর রহমান আরো জানান, পরীক্ষার পর কেন্দ্রসচিব, প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষকের স্বাক্ষর করা সিটগুলোও নকল করা হয়েছে।

এ ধরনের অডিয়োর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমান সচিব এবং চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, আমার পেছনে তো মানুষ লেগে আছে। আবদুর রহমানের অডিয়ো রেকর্ডের বিষয়ে কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসির ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) মো. তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই আদেশ দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের মনিটরিং ও ইভালুয়েশান উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির হোসেনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। 

কমিটিতে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক এবং ইএমআইএস সেলের খন্দকার আজিজুর রহমানকে সদস্য করা হয়। এর আগে গত ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিভাগের উপসচিব শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার আদেশ থাকলেও কমিটিই গঠিত হয়েছে ১৬ দিন পরে। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমানে সচিব ও চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। কেবল বাংলা ছাড়া সব বিষয়ে তিনি জিপিএ-৫ পান। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে জিপিএ-৫ হয়। বাংলায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে যায়। আবেদন করতে গিয়ে দেখে কে বা কারা আগে থেকে সব বিষয়ের জন্য আবেদন করে রেখেছে। এ ঘটনায় ছেলের পক্ষে তার মা বনশ্রী নাথ পাঁচলাইশ থানায় গত ৪ ডিসেম্বর জিডি করেন। সেই জিডিতে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য কে আবেদন করেছে, তা বের করার আবেদন জানানো হয়। 

এদিকে কমিটি হওয়ার পর অনিয়মের আলামতগুলো সরিয়ে ফেলতে সহায়তার জন্য এলপিআরে থাকা সাবেক সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদকে গত ১৫ এপ্রিল থেকে দৈনিক ২ হাজার টাকা মজুরিতে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ফলাফল কেলেঙ্কারিতে তার শাস্তি হয়েছিলো।  

অডিয়ো ফাঁস ও কিবরিয়া মাসুদকে দায়িত্বে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ইদ্রিস আলী জানান, জালিয়াতির আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিবরিয়া মাসুদকে আবার ফলাফল প্রস্তুতের মতো স্পর্শকাতর শাখায় আনা হয়েছে। 

অডিয়ো ফাঁসের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুজিবুর রহমান ও প্রোগ্রামার আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, উল্লিখিত ধরনের অডিয়োটি আবদুর রহমানের কাছ থেকে জোর করে চাপ দিয়ে নেওয়া হয়েছে। অডিয়োতে উল্লিখিত ঘটনা সঠিক নয়।
 

জনপ্রিয়