
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বইছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল
উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘু চাপের সৃষ্টি হওয়ায় বরিশালে রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নৌ বন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে বরিশাল নৌবন্দরের কর্মকর্তারা।
বরিশালের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘু চাপের সৃষ্টি হওয়ায় বরিশাল ও এর আশপাশের এলাকায় মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় পায়রা বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত ও বরিশাল নদীবন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ছিল ১৫ কিলোমিটার এবং সর্বনিম্ন ১০ কিলোমিটার।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে গত তিন দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও গতকাল সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টিপাত। গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নিচু স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। বেড়েছে নদ-নদীর পানির উচ্চতা। উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পটুয়াখালীর পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মাছধরা ট্রলার সমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে কমলনগরের চরমার্টিন এলাকায় রাস্তা ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে খেটে খাওয়া মানুষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।
টানা বৃষ্টির কারণে পৌরশহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আর এর প্রভাবেই এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের রামগতি আবহাওয়া সতর্কীকরণ অফিসের কর্মকর্তা মো. সৌরভ হোসেন।
এই কর্মকর্তা জানান, সাগরে লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার সকালে নিম্নচাপে রূপ নেয়। এই কারণে ১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাথে ঝড়ো হওয়ায় বইতে পারে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করা জেলেদেরকে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ থেকে মাছ শিকারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ী
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সকাল ৯টা থেকে এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঝড়ো হাওয়া ও উত্তাল পদ্মার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু করা হবে।
চাঁদপুর
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ-মতলব রুটের যাত্রীবাহী ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ সকাল থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটিএ (যান) উপ পরিচালক বশির আলী খান।
এদিকে ছোট নৌযান বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল। যদিও যাত্রী উপস্থিতি কম। বিলম্বে ছাড়ছে বড় লঞ্চ।
এদিকে লঘুচাপের কারণে চাঁদপুরে নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর সমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। আজ সকাল ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
চলমান ঝড়-বৃষ্টি থাকায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। এতে করে সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও বাজার এলাকায় দেখা গেছে মানুষের তুলনামূলকভাবে কম উপস্থিতি।
চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সুরুজ জামান ও উপপরিচালক বাবু লাল বৌদ্ধ বলেন, আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বড় লঞ্চগুলো যাত্রী না পেলে যাচ্ছে না। তবে নির্দেশনা আসলে বড় লঞ্চ চলাচলও বন্ধ।
নোয়াখালী
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে সকাল থেকে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সাথে মাঝে মাঝে ঝড়ো বাতাস হচ্ছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুষ্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সাগরে তিন নম্বর স্থানীয় সংকেত জারি করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, সাগর উত্তাল থাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে সব ধরনের নৌ পারাপার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে। এছাড়া সকল ধরনের মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিকায় আহমেদ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় তিনি উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধগুলোর দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি
মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে খাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। রাত থেকে চলা বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে থাকায় দীঘিনালার মাইনী নদীর পানি বাড়তে পারে। বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সবুজবাগ, শালবন, কুমিল্লায় টিলাসহ বিভিন্ন উপজেলা পাহাড় ধসের শঙ্কায় রয়েছে প্রায় হাজারের বেশি পরিবার। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি সড়কে মাটি ধসে যাওয়া শঙ্কা মোকাবিলায় কাজ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জনবল ও মাটি সরানো সরঞ্জাম।
গত ২৪ ঘণ্টায় খাগড়াছড়িতে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।