ঢাকা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ , ২০ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে আগ্রহ নেই মানুষের

আন্তর্জাতিক

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে আগ্রহ নেই মানুষের

ঋণসংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার সরকার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ৭৫তম জাতীয় স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করছে। আজ শনিবার ৪ ফেব্রুয়ারি দেশটির স্বাধীনতা দিবস। দিবসটি উদ্‌যাপনে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৫ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ টাকা (৫ লাখ ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার, ১০৭ টাকা দরে) ব্যয় করছে সরকার।

দেশের চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে এই দিবস উদ্‌যাপনে আগ্রহ নেই সাধারণ নাগরিকদের। এ নিয়ে বিক্ষোভ করে তাঁরা নিজেদের অসন্তোষ জানান দিচ্ছেন।বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকুচিত হওয়ায় গত বছর শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকটের পাশাপাশি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়। এতে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।

তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানিঘাটতির কারণে দেশের অনেক এলাকায় এখনো দিনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বার্ষিক খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৯৪ দশমিক ৯ ও মূল্যস্ফীতি ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা যথাক্রমে ৫৪ দশমিক ২ ও ৬০ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে।

গত বছরের মে মাসে ঐতিহাসিকভাবে ঋণখেলাপি হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা এখন ঋণদাতা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আর্থিক নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়া। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ শ্রীলঙ্কা সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ৩৬ শতাংশ পরিবারে খাদ্যের নিরাপত্তা নেই।

আর ইউনিসেফের গত জুনের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫৬ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটি আজ বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করছে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে দেশটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর গ্যালে ফেসে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। গত বছর এই গ্যালে ফেসের কাছেই কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভ হয়েছিল। ব্যাপক জনবিক্ষোভ সামাল দিতে না পেরে গত বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালান। ক্ষমতায় আসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। নতুন সরকার আসার পর এটাই প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন।

স্বাধীনতা দিবসের উদ্‌যাপনে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল সরকারি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘আরাগালয়া’ আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা কলম্বোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে গত বছর ‘আরাগালয়া’ আন্দোলনের কর্মীরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার ‘সত্যাগ্রহ’ ঘোষণা করেছিলেন।

‘আরাগালয়া’ আন্দোলনের কর্মী মেলানি গুনাতিলাকা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদাই পূরণ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সরকারি তহবিলের এই ব্যাপক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তুলে ধরতেই আমরা এই “সত্যাগ্রহ” আন্দোলন করছি।’

মেলানি গুনাতিলাকা বলেন, চিকিৎসার অভাব, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ও চাহিদা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেছেন, দেশের মানুষ ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করেই ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের ব্যয় ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা উচিত ছিল।

দেশের চিকিৎসকদের সংগঠন জেনারেল মেডিকেল অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের (জিএমওএ) গণমাধ্যমবিষয়ক মুখপাত্র চামিল বিজেসিংঘে বলেন, দেশজুড়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব হাসপাতালেই এখন ওষুধের সংকট চলছে। প্রায় ১৪০টি ওষুধের মজুত শেষ। বেশির ভাগ ওষুধেরই সরবরাহ কম। ওষুধের এই ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

চামিল বিজেসিংঘে আরও বলেন, ‘এ কারণে জিএমওএ কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিতে চাই, সীমিত সরকারি তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও অনেক অগ্রাধিকার রয়েছে। বিশেষ করে ওষুধের ঘাটতি ও জনগণের দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি ভাবনায় থাকা উচিত।’

তবে এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মালিন্দা সেনেভিরত্নে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, একটি রাষ্ট্রকে নানাভাবে তার মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করার একটি উপায় হলো সম্মিলিতভাবে স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় ছুটি উদ্‌যাপন করা।

মালিন্দা বলেন, গত বছর জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাব এবং গণবিক্ষোভ সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কানরা সিনহালা ও হিন্দু নববর্ষ উদ্‌যাপন করেছে। একইভাবে স্বাধীনতা দিবসও সম্মিলিতভাবে উদ্‌যাপন করতে হবে। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির বিবেচনায় ২০০ মিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি (৫ লাখ ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার) ‘বিপুল’ অর্থ নয়।

গত সপ্তাহে ন্যূনতম খরচে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা দিবস অবশ্যই উদ্‌যাপন করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলবে, শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের অর্থ পর্যন্ত নেই।

কলম্বোভিত্তিক পলিসি থিঙ্কট্যাংক অ্যাডভোকেট ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ধননাথ ফার্নান্দো বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে দেখেছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, দেশের শিক্ষা বাজেটের (২৩২ বিলিয়ন রুপি) তুলনায় এই ২০০ মিলিয়ন রুপি খুব বেশি টাকা নয়। কিন্তু মানুষ বিষয়টিকে খুবই আবেগ দিয়ে ভাবে। বিশেষ করে দেশে যখন শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, তখন এভাবে ভাবার বিষয়টি প্রকট হয়। কখনো কখনো সরকারের ২০ রুপি ব্যয়ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক না–ও হতে পারে। কারণ, মানুষ যখন কষ্ট পাচ্ছে, তখন সরকার উদ্‌যাপনের জন্য খরচ করছে। তাই স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে ব্যয় না করে এই অর্থ সঞ্চয় করা একটা ভালো বিকল্প ছিল।

জনপ্রিয়