
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ডলারের মূল্যে ডিভ্যালুয়েশন, ফ্রেইট কস্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ ইত্যাদি কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। যেসব কর্পোরেট কোম্পানি বা বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সব সময় তাদের অভিযান পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, আলু ন্যায্যমূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে উৎপাদক পর্যায় থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত অধিদপ্তর লিংকেজ করে দিচ্ছে। যাতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা যায়। তবে শুধু আলুর দাম কমালেই হবে না, কৃষকদের উৎপাদন খরচও বিবেচনা করতে হবে। সরকার বাধ্য হয়ে ডিম আমদানি করছে। যারা ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি করছে তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্যই ডিম আমদানি করা হচ্ছে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোক্তা অধিকার আইনের কিছুটা দুর্বলতার পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। ১৭টি জেলায় অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা নেই। তারপরও সারাদেশে প্রতিদিন অধিদপ্তরের ৪০-৫০টি টিম দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু বিক্রেতা নয় ক্রেতাসহ সাধারণ জনগণকেও ভয়েস রেস করতে হবে। যাতে সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। সেই লক্ষ্যেই ভোক্তা অধিকার সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে।
আজ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সচেতনতামূলক এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি যৌথ ভাবে আয়োজন করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। প্রতিযোগিতার আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়াম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রেস ব্রিফিংটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়াম্যান হাসান আহমেদন চৌধুরী কিরণ বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ ও জেল-জমিমানা বা শাস্তি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এতে ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।
ঈদ, পূজা-পার্বন বা কোন উৎসব আসলেই সুযোগ বুঝে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যাবে না। যোগান থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে চাহিদা বাড়লে মূল্য বৃদ্ধি করা উচিত নয়। তবে দেশে এখনো অনেক মানবিক ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট কোম্পানি রয়েছে যারা জনগণকে স্বস্তি দিয়ে দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করে। যশোরের মাংস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম স্ব-উদ্যোগে যেভাবে মাইকিং করে গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কমিয়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছে, তা সিন্ডিকেট, মজুদদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য বড় একটা উদাহরণ। তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন লাভ রেখেও ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা যায়।
অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা উপস্থিত ছিল। আমাগী সপ্তাহে প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল এবং পরবর্তীতে গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চ্যাম্পিয়ন দল পুরস্কার হিসেবে পাবে নগদ ২ লক্ষ টাকা এবং রানারআপ দল পাবে নগদ এক লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট সচেতনতামূলক এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি এমপি।