
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অধিনায়ক রোহিত শর্মার অবসরের ঘোষণার পর থেকেই গুঞ্জনটা চলছিল। বিরাট কোহলিও নাকি সাদা পোশাকে আর খেলতে চান না। যা ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে (বিসিসিআই) জানিয়েও দিয়েছিলেন তারকা এই ব্যাটার।
তাই লাল বলের ক্রিকেটে তাকে আর দেখা যাবে কি না, সেটা নিয়ে বাড়ছিল জল্পনা। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্রিকেটের এলিট ফরম্যাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।
সোমবার (১২ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ইন্সটাগ্রামে এক পোস্টে এই ঘোষণা দেন কোহলি। বিদায়ের ঘোষণায় ৩৬ পেরুনো ডানহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপি পড়েছিলাম।
সত্যি বলতে তখন জানতাম না, ক্রিকেটের এই ফরম্যাট আমাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পনাও করিনি। এই ফরম্যাট আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। সারা জীবন এই শিক্ষা বহন করব।’
কোহলি লিখেছেন, ‘সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত গভীর বিষয় থাকে। শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময় খেলা, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেউ দেখতে পায় না। তবে এগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।
যখন এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি এটা মোটেও সহজ ছিল না। তবে এটাকেই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। আমি আমার সব কিছু দিয়েছি, বিনিময়ে যতটুকু প্রত্যাশা করেছি তার চেয়েও বেশি সেটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় কোহলির। ১৪ বছরের পথচলায় ভারতের হয়ে ১২৩ টেস্টে করেছেন ৯ হাজার ২৩০ রান।
একটা সময় গড়টা পঞ্চাশের বেশি থাকলেও শেষদিকে নেমে এসেছে ৪৬.৮৫-তে। দীর্ঘ এই পরিসরে কোহলি ৩১ ফিফটির পাশাপাশি করেন ৩০ সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরিরসংখ্যা ৭টি। তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ২৫৪। টেস্টে কোহলির চেয়ে ভারতের হয়ে বেশি রান আছে আরও তিনজনের- কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় ও সুনিল গাভাস্কার।
টেস্টে অবশ্য সাম্প্রতিক সময়টা কোহলির ভালো যাচ্ছিলো না। রান খরায় প্রশ্নের মুখে পড়ছিলেন বারবার। গত অস্ট্রেলিয়া সফরের পর থেকেই টেস্ট থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ওই সফরে প্রথম টেস্টে শতরান করলেও বাকি সিরিজ়ে ব্যর্থ হন তিনি। তাই আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের আগেই জায়গা ছেড়ে দিলেন তিনি। এর আগে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যান কোহলি। রোহিতের মতন তিনিও এখন শুধু ওয়ানডে সংস্করণ খেলবেন।
আগামী জুনে পাঁচ টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারত। এই সফরের আগে রোহিত শর্মা অবসরে গেছেন। কোহলিও অবসর নিলে দলের ব্যাটিং লাইনআপ অনেকটাই অনভিজ্ঞ হয়ে পড়বে, এই চিন্তা থেকে নাকি কোহলিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছিলো বিসিসিআই। কিন্তু তিনি হাঁটলেন রোহিতের পথেই।
কোহলিকে অবসর না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রায়ান লারাও। কিন্তু কোহলি বিসিসিআই কিংবা লারা কারো কথাতেই রাজি হননি।
২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা করলে কোহলিকে ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যদিও দলকে আইসিসির কোনও বড় ট্রফি জেতাতে পারেননি তিনি। তবে অধিনায়ক হিসেবে তার টেস্টে রেকর্ড ধারাবাহিকতার কথা বলে যায়।
কোহলির অধিনায়কত্বের অধীনে ২০১৮-১৯ অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারত এক নম্বর টেস্ট টিম হিসাবে ছিল।
কোহলি টেস্ট ম্যাচে সবচেয়ে সফল ভারতীয় অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে ৬৮ টেস্টের মধ্যে ৪০ টিতে ভারতকে জিতিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে ১৫ জয় রয়েছে দেশের বাইরে। যা তাকে জয়ের বিচারে ভারতের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক করে তুলেছে। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করা হয় কোহলিকে। কোহলির বিদায়ে এক বর্ণিল যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল।