ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

রোজা রাখলে মেজাজ খিটখিটে হয় কেন?

লাইফস্টাইল

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

সর্বশেষ

রোজা রাখলে মেজাজ খিটখিটে হয় কেন?

রমজান মাসে একটানা রোজা রাখার কারণে অনেকেরই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে অনেকেই ধারণা করেন, দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে বা রোজা রাখার কারণে হয়তো মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের এই মাসেও অনেক মানুষকে দেখা যায় সামান্য বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত রাগে ফেটে পড়েন। তবে এর কারণ কি শুধুই না খেয়ে থাকা বা রোজা রাখা নাকি অন্য কিছু, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

রমজানে মূলত খাদ্যাভ্যাসের ধরন ও ঘুমের সময় পরিবর্তনের কারণে মেজাজে পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

তবে রোজার রাখার সঙ্গে মেজাজ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই বরং রোজার অনেক উপকারিতা আছে। মানুষের বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংরক্ষণে ও অভ্যন্তরীণ শক্তি সংরক্ষণে একটি বিস্ময়কর প্রভাব ফেলে রোজা।

ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, একজন রোজাদার ব্যক্তি প্রাতরাশ ও সেহরিতে যা খান তা ওই ব্যক্তির মেজাজের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যা পেট ও মেজাজ দুটোই ঠান্ডা রাখতে পারে।

রোজার সময় মেজাজ পরিবর্তনের আরও এক কারণ হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। অনেকের জন্য রমজানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও উপবাসের পুরো সময়জুড়ে নিজেকে শান্ত ও সংযম রাখা। এমনকি খাদ্য ও পানীয় দীর্ঘসময় ধরে পরিহার করা সব মিলিয়ে নিজের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করতে হয়, অর্থাৎ নিজের মনকে বশে আনতে হয়। আর এ কারণে মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।

মানুষ যেসব খাবার খায় সেগুলোকে মানবদেহ অ্যামাইনো অ্যাসিড, চর্বি ও সাধারণ শর্করাতে রূপান্তরিত করে। যখন এই উপাদানগুলো ফুরিয়ে যায়, তখন শরীর সতর্কতা জারি করতে শুরু করে। বেশ কয়েক ঘণ্টা উপবাসের পর শরীরে জমে থাকা অনেক রাসায়নিক ধ্বংস হতে শুরু করে। এই রাসায়নিকগুলো ক্ষুধা ও রাগের অনুভূতি সৃষ্টি করে। উপবাসের সময় শরীরে বেশকিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে যা মেজাজ পরিবর্তনের কারণ হয়, এই মেজাজ পরিবর্তনের কারণগুলো হলো-

* ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ের প্রতি আসক্তি যেমন- চা, কফি ও কোমল পানীয়, যা রোজাদারের শরীরে ক্যাফেইনের মাত্রা কম থাকার কারণে অস্থির, কম উৎপাদনশীল শক্তি ও রাগ অনুভব করে।
 
*পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে জেগে থাকা ও দিনের আলোতে ঘুমের ক্ষতিপূরণ না হওয়া, যা শরীরের জৈবিক ঘড়িতে ভারসাম্যহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
 
* কিছু শারীরিক উপসর্গ অনুভব করা যা রোজা রাখলে বাড়তে পারে, যেমন- পেটের অম্লতা, বদহজম, মাথাব্যথা, অলসতা ও কম শক্তি।
 
* খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটার ফলে মেজাজ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও ব্যাঘাত ঘটে।
 
* কেটোনস বৃদ্ধি পায়। এই রাসায়নিক রোজা রাখার ফলে সৃষ্ট গ্লুকোজের অভাব থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়, যা কেটোনের নিঃসরণ বৃদ্ধির কারণ হয়। ফলে দিনের বেলায় রোজাদারের মেজাজে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
 
* অটোফেজি একটি উপকারী প্রক্রিয়া, যা উপবাসের সময় ঘটে। উপবাস শরীরের বর্জ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মুক্ত করতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরের (বিডিএনএফ) নিঃসরণ বাড়ায়।

এটি একটি প্রোটিন যা উপবাসের সময় বৃদ্ধি পায় ও এই প্রোটিন অনেক নিউরনের সঙ্গে যোগাযোগ করে, মস্তিষ্কের কিছু অংশে। যা স্মৃতি, শেখার ও জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন অধ্যয়ন দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব উপবাসের প্রথম দিনগুলোতে প্রদর্শন হয়, তারপরে শরীর শিগগিরই এই খাবারের প্যাটার্নে অভ্যস্ত হয়ে যায় ও শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তনের উন্নতি ঘটতে শুরু করে।

রোজা রাখার সময় বিরক্তি ও মেজাজের পরিবর্তন এড়াতে কিছু স্বাস্থ্য টিপস অনুসরণ করতে হবে-

* রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। দিনের বেলা বিশেষ করে বিকেলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাবেন না।
 
* সেহরিতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, যাতে সারাদিন সতেজ থাকতে পারেন। স্ট্রবেরি, ডার্ক চকোলেট, ক্যামোমাইল ইত্যাদি খেতে বা পান করতে পারেন।
 
* জটিল কার্বোহাইড্রেট ও পুরো শস্য জাতীয় খাবার যেমন- ওটস, ব্রাউন রাইস ও যেসব খাবারে ফাইবার বেশি, যেমন ফল ও সবুজ শাকসবজি এগুলো রাখুন খাদ্যতালিকায়। এই খাবারগুলো শরীরে ধীরে ধীরে শর্করা সরবরাহে ভূমিকা রাখে, যা রক্তে হরমোনকে স্থিতিশীল রাখে।
 
* যতটা সম্ভব পরিমার্জিত চিনিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিন, যেমন- চিনিযুক্ত পানীয়, সাদা রুটি, পিৎজা ও কেক।
 
* সেহরি ও ইফতারের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ ডিহাইড্রেশন মেজাজ পরিবর্তন ও হতাশার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এমনকি মাথাব্যথার কারণ হয়, যা মেজাজকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
 
* পাকস্থলীর অম্লতা সৃষ্টি করে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন- ভাজা এও মসলাদার খাবার ইত্যাদি, কারণ পেটের অম্লতাও মেজাজের পরিবর্তন ঘটায়।

* ইফতারের আগে সামান্য ব্যায়াম করলে মেজাজ উন্নত করে এমন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে।
 
* স্নায়ুতন্ত্র ভালো রাখতে ও চাপ প্রতিরোধ করতে ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন- খেজুর ও মিষ্টি আলু।
 
* স্ট্রেস ও টেনশন কমানোর ক্ষমতার জন্য পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন- কলা, দই ও লাল মটরশুঁটি।
 
* ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালং শাক ও স্ট্রবেরি নিয়মিত খেলে সুখের অনুভূতি বাড়বে ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
 
* বিষণ্নতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতার জন্য ম্যাগনেসিয়াম ও ইউরিডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- বিটরুট ও ডার্ক চকোলেট খান।

সূত্র: গাল্ফ নিউজ

জনপ্রিয়