ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

রোমানিয়ার ভিসা পেতে আর যেতে হবে না দিল্লি

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:২০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

রোমানিয়ার ভিসা পেতে আর যেতে হবে না দিল্লি

জানিয়ারিতেই ঢাকায় চালু হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের সম্ভাবনাময় দেশ রোমানিয়ার শ্রম কনস্যুলার মিশন অফিস। অফিস স্থাপন হয়ে গেলে হাজার হাজার ভিসাকাক্সক্ষী রোমানিয়াগামী কর্মীকে আর দিল্লিতে ভিসার জন্য ছুটতে হবে না। কমবে দুর্ভোগও। সাশ্রয় হবে অভিবাসনে ব্যয়ের টাকা। গত বছর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাবেক একজন মহাপরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তার অনৈতিক প্রস্তাবের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রোমানিয়া সরকারের নির্দেশে ৬ সদস্যের অস্থায়ী ভিসা মিশন অফিস গুটিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

আওয়ামী সরকারের আমলে গত বছর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাবেক একজন মহাপরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তার অনৈতিক প্রস্তাবের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রোমানিয়া সরকারের নির্দেশে ছয় সদস্যের অস্থায়ী ভিসা মিশন অফিস গুটিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এমন অভিযোগ ওই সময় বিএমইটির অভ্যন্তরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও রোমানিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মুখে মুখে ছিল।

রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটি সংশ্লিষ্ট নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ার শ্রমবাজারটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পায়। এখন নানা কারণে বাংলাদেশীদের অবস্থান তিন নম্বরে আছে। যদিও রোমানিয়া সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম আরো সহজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ছয়জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী ভিসা অফিস খুলেছিল কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ষষ্ঠ তলায়। ইন্টারভিউর মাধ্যমে ভিসা প্রদান শুরুর একপর্যায়ে ওই অফিস বন্ধ করে তারা দিল্লিতে চলে যান। এর পর থেকে শুরু হয় শ্রমিকদের ভোগান্তি। যারা নিয়োগ কর্তার কাছ থেকে কর্মীর নামে চাহিদাপত্র এনেছিলেন তারা দিল্লি গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে পড়তেন ভোগান্তিতে। তাদের বেশির ভাগেরই ভিসা আবেদন ভিসা সেকশন থেকে রিজেক্ট করে দেয়া হয়। এতে ওইসব ভিসা না পাওয়া কর্মীদের লাখ লাখ টাকা এজেন্সি মালিকদের পকেটে আটকে যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো তাদের জমা দেয়া টাকা এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন পর রোমানিয়া সরকার তাদের শ্রমিক সঙ্কট অনুভব করতে পেরে আবারো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য ভিসা অফিস স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে রোমানিয়াগামী শ্রমিকদের ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে। যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় তাহলে সেটি পরের মাস হতে পারে।

মূলত নিয়োগ কর্তাদের চাহিদার বিপরীতে রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ভিসা মিশন অফিসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে যাচ্ছে। একই সাথে আগের ইস্যু হওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ক পারমিটগুলো ১৫ জানুয়ারি থেকে ১২৫ ইউরো ফি দিয়ে নবায়ন করার জন্যও রোমানিয়ান নিয়োগ কর্তাদের এক বার্তার মাধ্যমে বলা হয়েছে। আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকায় ভিসা অফিস পরিচালনা করা হলেও এবার আইএলওর মধ্যস্থতায় ঢাকায় বিশেষ ভিসা সেন্টার দিয়ে কাজ করা হবে বলে রোমানিয়া সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে রোমানিয়ায় আবেদন করে বসে থাকা কর্মীদের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনারও নির্দেশ দিয়েছে রোমানিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়। এ জন্যই আগের ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিটগুলো নবায়ন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে নিয়োগকর্তাদের।

এই প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি আবারো একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ প্রায় ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশী কর্মী আবেদন করার পরও ভিসা পাননি। অনেকে টাকা দিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও রোমানিয়ায় যেতে পারেননি। এবার তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের সুযোগ এসেছে। তবে সবাইকে এবার সতর্ক থাকতে হবে। গত বছর রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা দেয়ার কনস্যুলার মিশন অফিস রাতের আঁধারে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

বুধবার রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ঢাকায় রোমানিয়ার ভিসা অফিস আবারো খোলা হচ্ছে” এমন তথ্য আমার মোটেও জানা নেই।

রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী এরপর রোমানিয়ার শ্রমবাজার খোলা প্রসঙ্গে বলেন, আমার দেশের সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় আমি রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত চারটি দেশে বাংলাদেশী কর্মীদের আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা দালাল দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে এসেই ইতালি, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। আর পালানোর কারণেই রোমানিয়া সরকার এখন কর্মী নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যদি কর্মী পালানো ঠেকানো যায় তাহলে অনেক শ্রমিকের এই দেশে এসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যদিও আজকেই আমার শেষ অফিস রোমানিয়াতে। নতুন কর্মস্থল এশিয়ার কোনো একটি দেশে চলে যাব।

রোমানিয়া দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশী শ্রমিকদের দিল্লিতে গিয়ে ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। এটি রোমানিয়া সরকার অবগত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় আন্তর্জাতিক কোনো একটি ভিসা সেন্টারের সহযোগিতায় রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। সেটি আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, রোমানিয়া সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত বিল পাশ না হওয়ার আগ পর্যন্ত ভিসা অফিস খোলার সুযোগ নেই। তাই তাদের পার্লামেন্টে অফিস খোলার বিলটি পাস হওয়ার পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

শুক্রবার একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক ঢাকায় অস্থায়ী ভিসা অফিসটি কাদের কারণে চলে গেছে সেই ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেন, বিএমইটি’র আগের মহাপরিচালক শহীদুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা অফিসের কিছু কর্মকর্তার কাছে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে দাবি করেছিলেন। এমন অনৈতিক দাবি মানতে না পেরে তারা অফিস গুটিয়ে দিল্লি যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করলেই আরো অনেক কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে তারা দাবি করেন।
 

জনপ্রিয়