ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মিরাস থেকে বঞ্চিত করার পরিণতি

মতামত

আলেমা উম্মে হাবিবা, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

মিরাস থেকে বঞ্চিত করার পরিণতি

জুলুমের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করা। বিশেষত পিতার মৃত্যুর পর বোনদের অংশ না দেওয়া। সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিজেরা ভোগ করা। বোনদের পক্ষ থেকে অংশ দাবি করা হলে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া বা তাদের এমন কথা শুনিয়ে দেওয়া যে, সম্পদের অংশ নিয়ে ভাইবোনের সম্পর্ক চিরতরে শেষ করে দিতে চাচ্ছ? আর কখনো বেড়াতে আসবে না? অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর ভাইদের বাড়িতে বেড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়।

অথচ এ বিষয়ে কোরআন সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, কম হোক বা বেশি হোক। এ অংশ সুনির্ধারিত। (সুরা নিসা: ৭)

সুরা নিসার বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উত্তরাধিকার সম্পদের বিধি-বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। মূলত মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের সঙ্গে চারটি হক রয়েছে : ১. মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। ২. তার ঋণ থাকলে পরিশোধ করা। ৩. অসিয়ত থাকলে পূরণ করা। ৪. উত্তরাধিকারদের মধ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় অবশিষ্ট সম্পদ বণ্টন করে দেওয়া।

এগুলো লঙ্ঘন করা কোরআনি বিধান লঙ্ঘন করার শামিল। যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন : এগুলো হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য আছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সুরা নিসা: ১৩-১৪)

তাছাড়া উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করলে তা অন্যের হক আত্মসাতের শামিল। এর দ্বারা হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক নষ্ট হয়। হাক্কুল ইবাদ নষ্টের গুনাহ এতটাই জঘন্য যা আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না। এমনকি তাওবার মাধ্যমেও হাক্কুল ইবাদ নষ্টের ক্ষমা পাওয়া যায় না। উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বোনদের বঞ্চিত করার যে অপরাধ, দুনিয়াতে এর কোনো বিহিত না করলে কষ্টার্জিত পুণ্য দিয়ে পরকালে তা পরিশোধ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন: আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং অন্যের সম্পদ গর্হিত পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তোমরা জেনেশুনে তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না। (সুরা বাকারা: ১৮৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? সবাই বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি যার কোনো টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে নামাজ-রোজা-জাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সঙ্গে ওই সব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো ওপর অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ওই সব পাওনাদারকে ওই ব্যক্তির নেকি থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তখন ওই সব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির ওপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম শরিফ: ৫৮১)

সুতরাং আসুন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে যার যতটুকু শরিয়তসম্মত হক, প্রত্যেকেকে তার হক বুঝিয়ে দিই। বোনদের হক যথাযথভাবে আদায় করি। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদের মোহে পড়ে পরকালের জীবন ধ্বংস করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

লেখক : মাদরাসা শিক্ষিকা

জনপ্রিয়