
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, এতদিন ন্যায়বিচার ছিল না, এখন ন্যায় বিচারের মধ্যদিয়ে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) সকালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই শাহবাগ মোড়ে জনসভায় যোগ দিয়ে এ সব কথা বলেন তিনি।
সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তি পেয়ে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান।
জনসভায় এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করছি। ধন্যবাদ জানাই আদালতকে। ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানোর জন্য। সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ, তারা ফ্যাসিস্টবাদের না হয়ে জনগণের পক্ষ নিয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে।
ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমেছিলেন বলেই দেশ নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াত নেতাদের ওপর জুডিশিয়াল কিলিং চালানো হয়েছে- এ কথা জানিয়ে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলা, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র জামায়াত ইসলাম করার কারণেই আমাকে এই মানবতাবিরোধী মামলার মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়।
এ সময় যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের স্মরণ করেন তিনি।
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করতে হবে এ কথা উল্লেখ করে যারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে ধরে এনে বিচার করার দাবি জানান আজহার।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মঙ্গলবার (২৭ মে) মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দেন। বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। যদিও এটি প্রহসনের রায় বলে আখ্যায়িত করে আসছে জামায়াতে ইসলামী।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে জামায়াত নেতা আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়।