ঢাকা সোমবার, ২৯ মে ২০২৩ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ আর্কাইভস ই পেপার

Udvash
Retina
Retina
Udvash
Retina
Retina

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৫ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৩:৩৬, ২৬ মার্চ ২০২৩

সর্বশেষ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এই তারিখে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে আসে। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইট পরিচালনা করে। নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকা যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়। অসংখ্য শহীদের রক্তে উর্বর হয়ে ওঠে পাললিক ভূমি। শুরু হয় প্রতিরোধ…; প্রতিরোধের প্রস্তুতি, যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা।

দিনটি বেদনা মিশ্রিত আনন্দের। তবে নিঃসন্দেহে স্মরনীয়। আর সে কারণেই যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ১০টা ৩০মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদানসহ সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হচ্ছে। 

বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন করে কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। 

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি।’ এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি। পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। পরিকল্পনা শেষে তারাই এ অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় আরো ৩ হাজার। ঢাকায় ঘটনার শুরু। গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে  বেড়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বললো শহর-বন্দর-গ্রাম। পুড়লো ঘর, পুড়লো বাজার। বাতাসে লাশের গন্ধ। প্রানের বাংলা যেন হয়ে উঠলো এক মহা শ্মশান।’

এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিলো, তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিলো।’

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাজজ্ঞ। হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে (২৬মার্চ) ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। 

জনপ্রিয়