ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

মতামত

অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৬ মার্চ ২০২৪

সর্বশেষ

স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল রাষ্ট্র, সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। অবিভক্ত বাংলার একটি নির্দিষ্ট অংশ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে এ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠে এবং স্থানীয় ও বিদেশি শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিষ্ট্রীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ, এর ঠিক পরেই শশাঙ্ক, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজবংশ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন রাজবংশ শাসন করে।

দ্বাদশ শতকে সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের প্রবর্তন ঘটে। ১২০৫-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী নামের একজন তুর্কী বংশোদ্ভূত সেনাপতি রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের পতন ঘটান। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলশ্রুতিতে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিলো, যার রাজধানী ছিলো ঢাকা। তবে কলকাতাকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনরায় বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। এর ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা প্রদেশ গঠিত হয়। 

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ইন্ডিয়া নামে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা ভারতের অধিভুক্ত হয়। অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা বর্তমান বাংলাদেশ, পাকিস্তানের অধিভুক্ত হয়। শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ গভীর রাতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার অপারেশন সার্চলাইট নামে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের ওপর পরিকল্পিত গণহত্যা ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং জ্বালাও পোড়াও কার্যক্রম চালায়। সেই পরিস্থিতিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা ও ২৬ মার্চের ঘোষণা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

প্রায় ৯ মাস বাংলাদেশের মুক্তিকামী যোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে লড়াই করে। মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে পরাভূত করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকবাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ছাড়াও প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বারংবার ব্যাহত করেছে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডির বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিব, তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থলে অবস্থান করায় বেঁচে যান।  তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। 

এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ফলে দেশে তৈরি হয় রাজনৈতিক শূন্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেন। ৭২-এর ২৬ মার্চে বেতার ও টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে।’ ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ। বাংলা আমার ভাষা।’ 

বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সফল হয়েছে। কারণ, তার হাত ধরে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই উন্নয়নশীল দেশটি প্রায় দুই দশক ধরে বার্ষিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনপূর্বক উন্নয়নশীল দেশসমূহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন বাংলাদেশের এই উন্নতির চালিকাশক্তি রূপে কাজ করছে। আমাদের স্বাধীনতার বয়স এখন ৫৩ বছর। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটি খুব বেশি দীর্ঘ সময় না হলেও একটি জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য একেবারে কম নয়। স্বাধীনতার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিলো সবধরনের অধীনতা থেকে মুক্তি এবং সমাজে গণতন্ত্র, ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা। 

শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার পরিসমাপ্তিতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম সফরের সময় আরেকটি অভ্যুত্থানে নিহত হন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করলে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ হতে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ হাসিনার মধ্যে রয়ে গেছে তার নেতৃত্বের উত্তরাধিকার। বাবার আদর্শকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে তার সুযোগ্য কন্যা আত্মনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এই পথে বঙ্গবন্ধু-কন্যাকে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। স্বৈরাচারের শ্যেন দৃষ্টির নাগপাশে অন্তরীণ থাকতে হয়েছে বহুদিন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে এবং ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িতভার গ্রহণ করেন। 

বাংলাদেশ পৃথিবীর ৮ম জনবহুল দেশ, যদিও আয়তন বিবেচনায় দেশটির অবস্থান বিশ্বের ৯৪তম। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র্য। এ সত্ত্বেও গত দুই দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে, যেমন-জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সফলতা; সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দারিদ্র্য-বিমোচন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি; গত দু’দশকে মানুষের মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সুষম খাদ্যাভাস গড়ে ওঠা; অকাল মৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়া; জনগণের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হওয়া; জন্মকালে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়া; চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য-সেবা ব্যবস্থাপনায় প্রভূত উন্নতি; শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি; স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে নারী শিক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতি; সমাজের সকলক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন; ভর্তুকিপুষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন; প্রতি শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই ১ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া; গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি; বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি হওয়ায় বর্তমানে ৫৮টি পাবলিক, ১১৫টি প্রাইভেট এবং দুটো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; টেকনিক্যাল ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে গুরুত্বারোপ; উচ্চশিক্ষা খাতে প্রাইভেট উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার ফলে পৃথিবীর বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বল্পব্যয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি; সংবাদ-মাধ্যম স্বাধীনভাবে কর্ম সম্পাদন এবং বাংলাদেশে প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র ও ১৮ শ’র বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশ; সরকারি টেলিভিশন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য উপগ্রহভিত্তিক টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল সম্প্রচার; সফলভাবে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ; এক লাখ আঠার হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা সম্পদ আহরণে রায় অর্জন; নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ; জিডিপি বৃদ্ধি; পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা; সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন; কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ; মেট্রোরেল স্থাপন; সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান; রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ; পার্বত্য শান্তি চুক্তি; অসংখ্য অর্থনৈতিক জোন স্থাপন; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন; উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন; যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; হাতিরঝিল প্রকল্প স্থাপন; বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ ১৮ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাধমে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সহায়তা; প্রতি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন; একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন; কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা; বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার কার্য পরিচালনা; সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।

বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি নির্মূলকরণ। বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা ইত্যাদি সত্ত্বেও এই সুজলা সুফলা শস্যের ভাণ্ডার বাংলাদেশকে দ্রুততম সময়ে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন শুধু দেশপ্রেম, সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। 

শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিশ্ব দরবারে তিনি বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। ডিজিটাল তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেতা ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের আওয়ামী লীগের দায়িত¦ গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের তৃতীয় এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ বার এবং ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। তার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে তিনি বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। 

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীতে একটি মর্যাদার আসনে আসীন। এসবই সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। 

সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। কারণ, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি চেয়েছিলেন একটা ‘সোনার বাংলা’ গড়তে, তাই বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে সকলের সহযোগিতা আবশ্যক। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতো সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 
শেখ হাসিনা বার বার একটি কথা বলেন, আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছি তাই কোনো বিজয়ী জাতি কখনো মাথা নত করে থাকতে পারে না। এই একটি মন্ত্রই শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভায় বাংলায় ভাষণ দেন। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ব নেতাদের সামনে যুদ্ধ, অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রভাব এবং স্বার্থগত সংঘাতকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবমুক্তির প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরী পন্থা পরিহার করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমান সংকট সমাধানের বার্তাই নয়  বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার দিক-নির্দেশনা থাকায় বঙ্গবন্ধুকন্যার এই ভাষণে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

শেখ হাসিনা ৪টি মাইলস্টোন দিয়েছেন। প্রথম ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা আজ অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয় ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তৃতীয় ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ খ্রিষ্টাব্দের জন্য। সরকারের বর্তমান লক্ষ্য, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত এবং সরকারি সেবার শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা। আরো ৩০০ স্কুল অব ফিউচার ও ১ লাখ ৯ হাজার ওয়াই-ফাই কানেকটিভিটি, ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার এবং ২৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তরুণ বয়সে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সে পথ ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক যুগের বেশি পথচলায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। এখন লক্ষ্য ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে। পরিশেষে, বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করার লক্ষ্যে ৪র্থ শিল্পবিপ্লববের মাধ্যমে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তা হলে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। 

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। জাতির পিতার সেই স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সেই লক্ষ্যপূরণ করেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। 

পরিশেষে বলা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা একে অপরের পরিপূরক। সরকার, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সচেতন হলেও জনগণের সাহায্য ছাড়া কখনো তা সম্ভব নয়। তাই সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিপূর্ণতা দিতে হবে সবার আগে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতি বেগবান হবে। 

লেখক: সাবেক মহা-পরিচালক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) 

জনপ্রিয়