ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ , ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ : প্রাথমিক  শিক্ষার যন্ত্রণা

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০০:০০, ৩ মে ২০২৩

সর্বশেষ

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ : প্রাথমিক  শিক্ষার যন্ত্রণা

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি মনোকষ্টেও ভুগতেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমি তাঁদের উন্নয়নে এবং কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
নিজের অতৃপ্তি কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের ৫১ শতাংশই ছিলেন অ্যাডভোকেট। এর পরেই অবস্থান ছিলো কলেজ-হাইস্কুলের শিক্ষক ও সার্বক্ষণিক রাজনীতিকদের। ব্যবসায়ী ছিলেন শতকরা ২ থেকে ৩ শতাংশ। আর এখন ? ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। এই পরিসংখ্যান অবশ্যই যন্ত্রণা দেয়।’
জাতীয় সংসদে তাঁর সর্বশেষ ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার নেতা। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধতি দিয়ে আমি সংসদে কথা বলেছি। আমি কী চাই- সেটা বলার চেষ্টা করেছি। সংসদে এমপিদের পেশাগত পরিচয়ের পরিসংখ্যান যন্ত্রণা দেয় আমাকে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, যাঁরা রাজনীতি করেন, তাদের এগিয়ে নিতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আনতে হবে। তাঁরাই এমপি হবেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার, এখন সবাই এমপি হতে চান। সচিব ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা অবসরে গিয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের কেন এমপি হতে হবে ? আর তাঁরাই যদি এমপি হন, তাহলে যারা মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করেন, তাঁরা পাবেনটা কী ?’
মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ক্ষমতায় যেতেই হবে’- এ মানসিকতা বর্জন করতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে। ভালো মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি ও নির্বাচন করতে হবে। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, নইলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এটা সব রাজনৈতিক দলের বিশ্বাসে থাকলে রাজনীতি সমান গতিতে চলবে। তা ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। এ চেতনা সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে থাকতে হবে।’ এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনীতিবিদদের পরামর্শ দিয়েছেন, সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের বিশেষ করে তৃণমূলের শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষকসহ আপামর জনসাধারণকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এরই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তৃণমূলের মেহনতি মানুষের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে। চরম অভাব ও হাহাকারে মাঝে তিনি ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তাঁর বিশাল হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ প্রাথমিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তৃণমূলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়ে ছিলো নির্যাতিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষের প্রতি নিবিড় প্রেম। 
বঙ্গবন্ধু একবার তাঁর শিক্ষককে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে সবাইকে ডেকে বললেন, ‘তোরা দেখে যা আমার শিক্ষককে।’ কী অপূর্ব হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। শুধু শিক্ষক নয় শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা উভয়ের মাঝে বিদ্যমান। অথচ অনুরূপ ভালোবাসা সরকারের উচ্চপদে অনেকের মাঝে দৃশ্যমান নহে। তাদের ভালোবাসা তলানিতে যেয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে প্রভু-ভুত্যের সম্পর্ক। এ প্রসঙ্গে কয়েকবছর পূর্বের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের কার্যক্রম মনে এলো। তিনি যোদগান করেই তার পরিচিতি দ্রুত জানান দেওয়ার জন্য স্বল্পসময়ে বিধি লঙ্ঘন করে বহু শিক্ষক, কর্মচারীকে তাৎক্ষনিক সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে আবার দ্রুত আদেশ প্রত্যাহার করেন। অবসর গ্রহণের পূর্বে তিনি ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদ কেলেঙ্কারির বোঝা নিয়ে চাকরি থেকে বিদায় নেন। তার মুখে সর্বদাই জপতে দেখা যেত জয় বাংলাসহ সরকারে প্রতি তৈলাক্ত কথাবার্তা। সদ্য পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি একজন মেয়র পদপ্রার্থী। সরকারি বিধি মোতাবেক যাচাই বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত বা কোন প্রকার শাস্তি বৈধ  ও কাম্য নয়। 
সকল নাগরিকসহ কর্মচারীদের ফেসবুকের ওপর সর্বদা নজর রাখা সরকার ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরিহার্য। তবে রাষ্ট্র বিরোধী, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত বা কারো মনে আঘাত আসে বা সাম্প্রদায়িক উসকানি কাজ থেকে বিরত থাকা সকল নাগরিকের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। সরকারের বা সংশ্লিষ্টদের কর্তৃপক্ষের এমন কোন বৈষম্যমূলক আদেশ, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ক্ষুন্ন করে, কারো অধিকার ক্ষুন্ন করে এরকম আদেশ বা কর্মকাণ্ড করাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধের শামিল। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের বিরূপ সমালোচনা কাম্য নয়। ফেসবুকে বক্তব্য বা সমালোচনাও মার্জিত গঠনমূলক হওয়া প্রয়োজন। বৈষম্যমূলক আচরণসহ মুসলমান শিক্ষার্থীদের কায়দা, আমপারা কোরআনশরীফ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা ধর্মীয় অধিকার নষ্ট করার পর্যায়ে পড়ে। এ জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মার্জিতভাবে ফেসবুকে লেখার অধিকার কেন বিধি বহির্ভূত হবে ? ইউ, আর , সি ১৬ তম স্কেলের কম্পিউটার অপারেটরকে ১০তম স্কেলে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষক হিসাবে পদায়ন করবেন। আর ফেসবুকের ভয় দেখাবেন। এটা কতটুকু বিধিসম্মত? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য লেখার বিষয়ে দায়ী প্রথমত সংশ্লিষ্টরা। কোনো নাগরিকের কর্মচারীর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের জবাবদিহীতা সর্বাগ্রে কাম্য। বিশেষকরে প্রাথমিকের মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবেনা, যাতে অধীনস্থদের মহামান্য হাইকোর্টে রিট করার জন্য দারস্থ হতে হয়।
প্রাথমিকে বৈষম্যের পাহাড় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ প্রাথমিকের মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মকর্তারা অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ হলেও শিশু শিক্ষায় খুব বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে আসেননি। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রাথমিকের ক্যাডার সার্ভিস থমকে আছে। দক্ষ, অভিজ্ঞ মন্ত্রী, সচিব পদচারনায় প্রাথমিকের মন্ত্রণালয়ে চললেও কারোই খেয়াল নেই গরু, ছাগল হাঁস মুরগী শিক্ষাসহ সকল মন্ত্রণালয় ক্যাডার সার্ভিস আছে। অথচ প্রাথমিকের মত সর্ববৃহৎ মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার বিহীন।
সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মতো তৃণমূলের রাজনীতি করতে করতে বেড়ে ওঠা রাজনীতিবিদদের সংসদ সদস্য হতে হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালকের দপ্তরে নীতি নির্ধারণ পর্যায় সমৃদ্ধ করতে হবে। এজন্য প্রাথমিকের সকল পর্যায়ে নিয়োগের মহড়া বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদটি ধরে সর্বোচ্চ পদে শতভাগ পদায়ন করা। পদোন্নতি সুযোগ নিশ্চিত হলে, মেধাবী, চৌকষ, তরুণ ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাথমিকে অবস্থান করবে। ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জনবল নিয়ে গড়ে উঠুক আগামী প্রজন্মের স্মার্ট বাংলাদেশ, এটুকুই প্রত্যাশা। 

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

জনপ্রিয়