ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ 

সুন্দরবনের কুমির ঘুরছে বরিশালের নদীতে

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৮ মার্চ ২০২৪

সর্বশেষ

সুন্দরবনের কুমির ঘুরছে বরিশালের নদীতে

সুন্দরবনের লোনা পানির চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানোর পরে দেখা যাচ্ছে, এর তিনটি সুন্দরবনে ফিরে গেলেও একটি বহু পথ ঘুরে এখন বরিশাল বিভাগের জেলা পিরোজপুরে ঘোরাফেরা করছে।

কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি জানতে সম্প্রতি চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় চলে যায়। তবে একটি কুমির বন ছেড়ে মংলা, বাগেরহাট, মোড়েলগন্জ হয়ে এখন পিরোজপুরে ঢুকে পড়েছে।

মাত্র এগারো দিনে প্রায় একশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে কুমিরটি গতকাল বুধবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালির একটি নদীতে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের আশা, নির্দিষ্ট সময় পর হয়তো আবারো সুন্দরবনে ফিরে আসতে পারে কুমিরটি। তবে আপাতত সে তার নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজছে।

গত ১৬ মার্চ স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে কুমিরটি অবমুক্ত করা হয়েছিলো সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। এরপর এটি মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকেছে।

বন বিভাগ বলছে, এই গবেষণার মাধ্যমে সুন্দরবনের কুমিরের চলাচল ও গতিপথ সম্পর্কে তারা জানতে চায়।

বন সংরক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেছেন, আমরা মূলত এই গবেষণার মাধ্যমে তাদের আচরণ ও বসবাসের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করেছি। যে কুমিরটি বনের বাইরে গেছে সে হয়তো তার বসবাসের জন্য সুবিধাজনক জায়গা খুঁজছে।

কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে, জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিআইজেড)।

আইইউসিএন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বলেন, সুন্দরবনের কুমির কোথায়, কিভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে বিস্তারিত কোন গবেষণা হয় নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে।

বিশ্বে পাখি, কচ্ছপ, নেকড়েসহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে তাদের আচরণ নিয়ে গবেষণার নজীর রয়েছে। তবে বাংলাদেশের কুমির নিয়ে এভাবে গবেষণা এই প্রথম করা হচ্ছে।

ট্যাগ বসানো কুমিরগুলো এখন কোথায়?

কুমির প্রজনন কেন্দ্রের জুলিয়েট, যশোরের চিড়িয়াখানা থেকে আনা মধু এবং সুন্দরবনের খাল থেকে ফাঁদ পেতে ধরা আরও দুটি কুমিরের গতিপথ পর্যালোচনা করা হচ্ছে ওই দিন থেকেই।

এই গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এর মধ্যে তিনটি কুমিরই আছে সুন্দরবনের মধ্যে। কিন্তু একটি কুমির অন্য পথে চলতে শুরু করেছে।

১৬ মার্চ যে কুমিরটিকে সুন্দরবনের জংলা খাল থেকে ধরে গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়, এর পরদিন থেকেই ওই কুমিরটি সুন্দরবন ছেড়ে ছুটছে লোকালয়ের দিকে।

গত দশদিনে কুমিরটির গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই কুমিরটি সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্ট থেকে মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলায় পৌঁছেছে।

স্যাটেলাইট তথ্য বলছে, বর্তমানে বাকি তিনটি কুমিরই এখন অবস্থান করছে সুন্দরবনের মধ্যে নদী ও খালে। এর মধ্যে জুলিয়েট ও মধু ট্যাগধারী কুমির দুটি হারবাড়িয়া পয়েন্টের কাছাকাছি নদীতে রয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। আর অন্য যে কুমিরটিকে করমজল থেকে ধরে ট্যাগ বসিয়ে সেখানকার খালে ছাড়া হয়েছিলো। সেটি এখন আশপাশের খালেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তিনটি কুমির সুন্দরবনের মধ্যে থাকলেও একটি কেন এতো পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ের নদীগুলোতে ঢুকে পড়েছে সেটি নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে গবেষক দলেরও।

গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলছেন, লোনা পানির কুমিরগুলো আসলে কোন কোন দিকে মুভ করে সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের এক গবেষণার ধারণাকে স্পষ্ট করছে।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিচের দিকে সমুদ্রের কাছে নদীতেও অনেক স্যালাইন থাকে। আবার কোন কুমির যদি কম লবণাক্ততা পছন্দ করে, সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে আশপাশের নদী খালগুলোতে যায়।

বিশেষজ্ঞ আহমেদ বলেন, ওই এলাকার পানিতে লবণাক্ততা কম বলে হয়তো সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কিংবা সে যা খায় সেগুলো হয়তো সে বেশি পাচ্ছে সে কারণে কুমিরটি ওদিকে অগ্রসর হচ্ছে।

জনপ্রিয়