ঢাকা রোববার, ১২ মে ২০২৪ , ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাগ্নেকে খু*ন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৬

দেশবার্তা

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৬:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪

সর্বশেষ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাগ্নেকে খু*ন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৬

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শাহ কামাল ওরফে কদি (৩৫) নামে এক যুবককে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে জেল থেকে বের হয়ে এসে ভাগনেকে হত্যা করেন যোগানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তাঁর পরিকল্পনাতেই গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহ কামালকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান, তাঁর ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিদারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার ভাইটকামারী গ্রামের ফজল মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকায় ১১ কাঠা জমি বন্দক নেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাগনে শাহ কামাল। পরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে হাবিবুরের সঙ্গে ফজল মিয়ার পরিবারের ঝগড়া বাধে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল হাবিবুরের গুলিতে ফজলের ছেলে ইদ্রিস আলীর হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় হাবিবুর, তাঁর স্ত্রী-সন্তান, ভাতিজাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। সম্প্রতি এ মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসেন হাবিবুর। আর এ ঘটনার ফজল সেই জমি বুঝিয়ে দেননি শাহ কামালকে। তাঁকে ৭০ হাজার টাকাও দেননি। এ নিয়ে শাহ কামালের বর্গা নেওয়া জমির টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেন হাবিবুর ও তাঁর সহযোগিরা। এরপর আপসের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন তাঁরা। রাজি না হওয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাগনে শাহ কামাল কদুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তাঁরা।

পার্শ্ববর্তী গড়াকুড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন দিনমজুর শাহ কামাল কদু। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে শাহ কামাল কদুকে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে তাঁর মামা হাবিবুর চেয়ারম্যান বাড়িতে ডেকে নেন। পরে হাবিবুর, তাঁর স্ত্রী ঝরনা ও হাবিবুরের ভাই হারেজের পরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিবুরের ছেলে শান্ত ও তাঁর দুই ভাতিজা মস্তু ও রাহুল ওই রাতেই শাহ কামালকে ঘরে নিয়ে ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করেন। এরপর মরদেহ বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী লিলুখালের পাড়ে ফেলে আসেন তাঁরা।

এদিকে গভীর রাতেও স্বামী বাড়ি না ফেরায় শাহ কামালের স্ত্রী শেফালি বেগম (৩২) প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে খুঁজেও কোনো সন্ধান পাননি। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভাইটকামারী লিলুখালের পাড়ে মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহ কামালের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ওই দিন রাতেই নালিতাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন শাহ কামালের মা অছিরন বেগম। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিহতের মামাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

আসামিরা হলেন– নিহতের মামা হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তাঁর স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝরনা (৪৫), তাঁদের ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), হাবিবুরের দুই ভাতিজা মোস্তফা (৩০) ও রাহুল মিয়া (২২) এবং তাঁর ভাই হারেজ আলী (৫০)।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগে পার্শ্ববর্তী কান্দাপাড়ার আমির আলী নামে এক মাটিকাটা শ্রমিক খুন হন। এ ঘটনায় আপস মীমাংসা হওয়ায় বেঁচে যান হাবিবুর চেয়ারম্যান। এরপরই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের হাতে খুন হন প্রতিবেশী জমশেদ মেম্বারের ভাই খোরশেদ। এর কিছুদিন পরই জমশেদ মেম্বারের লোকজনের হাতে খুন হন হবি চেয়ারম্যানের ভাই জুলহাস।

স্থানীয় মোখলেছ বলেন, ‘এই হবি চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত চারটা খুন করেছেন। তাঁর ভয়ে কেও কিছু বলতে পারে না। তাঁর ছেলে একটা বড় সন্ত্রাসী। তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব বাহিনীও। চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের ফাঁসি চাই আমরা।’

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ীর যোগানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা চাই এ জঘন্য ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্ত শাস্তি হউক। নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়। পাশাপাশি হবি চেয়ারম্যানসহ সকল দোষীদের ফাঁসি চাই। এদের শাস্তি না হলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে না। আমরা এলাকাবাসী এলাকায় শান্তি চাই। সরকার যাতে এবার এ খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে।’

নিহতের ভাই ওসমান আলি বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা এভাবে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই, শাস্তি চাই।’

নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, রক্তমাখা নেকড়া, হ্যান্ড গ্লাভস ও রক্তমাখা এক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়। দুপুরে হাবিবুর, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেসহ ছয়জনকে আদালতে পাঠালে তিন আসামি হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে ছয়জন আসামিকেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

জনপ্রিয়