এমপিওভু্ক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া শুরু করেছেন। এর আওতায় রয়েছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পেয়ে তারা তড়িঘড়ি সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারারী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছেন। গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল চাপাইনবাবগঞ্জ সদর ও গোমস্তাপুরের শিক্ষকরা স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছেন।
আমাদের বার্তার এক প্রশ্নের জবাবে গোমস্তাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজর আসমা আক্তার বলেন, আমাদের বিভাগীয় ডিডি অফিস থেকে নির্দেশের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীকে সর্বজনীন পেনশনের জন্য আসতে বলেছি। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী গত বৃহস্পতিবারই এতে যুক্ত হয়েছেন।
সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একাধিক চিঠি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনবাইশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের চিঠিতে বলা হয়েছে, চন্দনাইশ উপজেলার এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী (১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী) বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে আগামী ২৫ এপ্র্রিল অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে তার তালিকা, এমপিও শিট এবং রশিদের সত্যায়িত হার্ডকপি বাহক মারফত উপজেো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানগণকে অনুরোধ করা হলো। এর ব্যতয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়ী থাকবেন।
জানা যায়, অতীব জরুরি হিসেবে এই চিঠি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে পাঠানো হয়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এমপিওভুক্ত ত্রিশ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এতোদিন সংশয়ে ছিলেন। একাধিক শিক্ষক- কর্মচারী নেতা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে তাদের যুক্ত হওয়া দরকার কিনা, বিষয়টি তারা জানতে চান।
দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে পাঠানো ইমেইলেও অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারীর প্রশ্ন ছিলো- এই স্কিমে যুক্ত হলে তাদের কী করতে হবে এবং সুবিধাই বা কি?
শিক্ষকরা জানান, এই পেনশন স্কিমে তাদের যুক্ত হতে হবে কি-না তা এখনো সরকার স্পষ্ট করেনি। এতোদিন অনেকটা দ্বিধা- দ্বন্ধের মধ্যে ছিলেন তারা। তবে এবার বিষয়টি স্পষ্ট হলো।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে তহবিলে সংস্থার প্রদানকৃত অর্থ ছিলো কর্মচারীর 'কন্ট্রিবিউশন' এর চেয়ে কম। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীর সমপরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। এতে পেনশনার অধিক লাভবান হবেন।
কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, নতুন স্কিমটি ভিন্ন আঙ্গিকের। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা ভবিষ্যতে যোগদান করবেন তারা অবসরে গেলে যেনো পেনশন পান সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যয় স্কিমের আওতায় এলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্ববজনীন পেনশন চালু করে। তখন এর স্কিম ছিলো ৪টি। পরে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ প্রত্যয় নামে আরো একটি স্কিম এই প্রকল্পে যুক্ত হয়। এতে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যুক্ত হতে পারবেন।