
পশ্চিমা বিশ্বে অনেক পরিবারই সন্তান দত্তক নিয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেকেই সন্তান দত্তক নেন। তবে প্রশাসনিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক পরিবার এমনিতেই সন্তানের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন। কিন্তু সন্তান দত্তক নেয়ার বিষয়টির আইনি কাঠামো অনেকের জানা থাকে না। পরবর্তীতে বিষয়টি নানা সমস্যা তৈরি করে। আধুনিক সময়ে দত্তক নেওয়ার কাঠামোগত ও প্রশাসনিক পদ্ধতি জানা জরুরি। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি শিশু দত্তক নেওয়া সম্ভব?
হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের অধীনে বৈধ অভিভাবকত্বের জন্য পারিবারিক আদালতে আবেদন করা। আইন অনুযায়ী শিশুর বয়স ১৮ বছরের কম হতে হবে। অনেকে মূলত স্ট্যাম্প পেপারে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহের মাধ্যমে সন্তান দত্তক নেয়ার কাজ করেন। কিন্তু এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। আইনজীবীদের মতে, এই অনাপত্র আইনিভাবে সন্তান দত্তক নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম পারিবারিক আইন ও ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়াহ) অনুযায়ী, এতিম বা অসহায় শিশুকে লালন-পালন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে সন্তানের পিতামাতার নামের স্থলে পালক দম্পতির নাম কখনো ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ইসলাম তার বৈধতা দেয় না।
তবে কেউ চাইলে সন্তানের অভিভাবকত্ব পেতে পারেন। অর্থাৎ সন্তানের পিতা-মাতা হিসেবে নিজেদের নাম ব্যবহার করতে পারবেন না। যদিও অনাপত্তিপত্র স্ট্যাম্পে করে নেওয়া হয় তাও ঝুঁকি থাকে। সন্তানের আসল বাবা-মা যদি সন্তানের কাস্টডি দাবি করে তাহলে আইন তাদের পক্ষেই চলে যাবে।
এ তো গেলো মুসলিম আইনের কথা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (সংশোধিত) অনুযায়ী একটি শিশুকে দত্তক নিতে পারে। তবে শুধু ছেলে শিশুকে দত্তক নেওয়া যাবে। পালক দম্পতিকে সমগোত্রের হতে হবে। আর অবশ্যই দত্তক নেওয়া ব্যক্তি হতে হবে একজন পুরুষ। পরিবার অনুমতি দিলেই কেবল স্ত্রী কোনও শিশুকে দত্তক নিতে পারবেন।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। অভিভাবকত্ব পাওয়ার পর সন্তান নিয়ে বিদেশ গমনের সময়ও আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ প্রচলিত আইনে অভিভাবকত্ব সন্তানের দত্তক নেওয়ার বৈধতা দেয় না। তাই দেশে সন্তান দত্তক নেয়ার বিষয়টি জটিল একটি প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে একটু জেনে নেওয়া ভালো।