দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ। ন’বছরের স্কুলপড়ুয়া ম্যাথিউ বার্জার পোষ্য কুকুর তাওকে ধরতে দৌড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। সেই পাথর আদতে ছিলো জীবাশ্ম। নতুন এক প্রজাতির মানুষের। খুব সম্ভবত ২০ লাখ বছর আগে পৃথিবীর বুকে বেঁচে ছিলো মানুষের সেই প্রজাতি।
ম্যাথিউয়ের বাবা লি আর বার্জার এক জন জীবাশ্মবিদ। আমেরিকার বাসিন্দা। ২০ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উত্তরে প্রাচীন জীবাশ্মের খোঁজ করে চলেছিলেন তিনি।
ম্যাথিউ চিৎকার করে ডেকে বাবাকে ওই জীবাশ্মের কথা জানান। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই জীবাশ্ম দেখে বিশ্বাসই করতে পারেননি লি। যা এতো বছর ধরে খুঁজে চলেছিলেন, তা-ই পেয়ে গেলেন ছেলের দৌলতে।
যে জীবাশ্মটি খুঁজে পেয়েছিলেন ম্যাথিউ, তা তার থেকে বড় জোর কয়েক বছরের বড়। উচ্চতা ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। সেই বালকের খুলি এতো বছর পরেও নিপাটভাবে সংরক্ষিত ছিলো।
পরে ওই বালকের সঙ্গে এক মহিলার জীবাশ্মও উদ্ধার করেন লি বার্জার এবং তাঁর দল। ওই দু’জনের শারীরিক গঠনে আদিম এবং আধুনিকতার মিশ্রণ রয়েছে। তারা ঠিক আজকের দিনের মানুষের মতো নয়। আবার আদিম বানর প্রজাতির মতোও নয়।
নতুন প্রজাতির নাম দেওয়া হয় অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা।
সেডিবার পা দু’টো লম্বা। নিতম্ব ও পেলভিসের গঠন মানুষের মতো। তার পরেও হাতগুলো বেশ লম্বা। বানরের মতো। গবেষকদের মতে, গাছে ওঠার জন্যই হাতের গঠন ও রকম।
সেডিবার মুখের সঙ্গে আধুনিক মানবের মুখের বেশ মিল রয়েছে। সেডিবার দাঁত ছোট। তবে আদিম মানবের মতো সেডিবারও মাথা বেশ ছোট। পা-ও আদিম মানবের মতো।
গবেষকদের মতে, ১৭ লাখ ৮০ হাজার বছর থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুকে ছিলো এরা। আধুনিক মানবের প্রথম প্রজাতির সমসাময়িক এরা।
বার্জারের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল মনে করছে, আধুনিক মানব হোমো স্যাপিয়েন্সের ঠিক আগের প্রজন্ম হোমো ইরেকটাসের পূর্বসূরি হলো এই সেডিবা। বা আধুনিক মানবের আগের প্রজাতির কোনও শাখাও হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সেডিবা আধুনিক মানব এবং তার পূর্বসূরির মধ্যে একটা সেতু। প্রমাণিত হয়, ২০ লাখ বছর আগেও মানুষ গাছের ডাল ধরে ঝুলতো। যাদের বলা চলে আধুনিক মানবের প্রথম প্রজন্ম।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভয়ঙ্কর জন্তুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাছে ঝুলে থাকতো তারা। তাই তাদের হাত অনেক লম্বা।
তবে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, সেডিবা আদিম এবং আধুনিকের মাঝখানের সেতু নয়। সেডিবা প্রজাতির আবিষ্কারও প্রথম নয়। আগেই এই প্রজাতির হদিস মিলেছিল। এরা আদিম কোনো প্রজাতির মানবের শাখা প্রজাতি। সূত্র: আনন্দবাজার