
“বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে এ বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে,” বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
সশস্ত্র সংঘর্ষের কারণে বিশৃঙ্খল সুদানে অবস্থানরত দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতিমধ্যে এই বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।”
পশ্চিমা দেশসহ অন্যান্য দেশ আরও কয়েক দিন আগে থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে। দেশটির সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের তুমুল লড়াইয়ের কারণে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশও অন্যদের পথে হাঁটল।
আগের দিন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন সুদানে দেড় হাজারের মত বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে দেশটিতে মিশন চালু রাখার সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল দেশটির দুই বাহিনী ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৪২৭ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। তীব্র সংঘর্ষের মাঝে দেশটির জনগণের মতো সেখানে বসবাসরত অন্য দেশের নাগরিকরাও আটকা পড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো গত কয়েকদিন থেকেই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে তোড়জোড় শুরু করে।
মঙ্গলবার ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির আগেই রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিষেবাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে অনেক দেশের দৌড়ঝাঁপের মধ্যে সোমবার লড়াইরত পক্ষগুলো ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।
এ অস্ত্রবিরতি মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে তিন দিন পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সপ্তাহ খানেকের লড়াইয়ে বহু হতাহতের মধ্যে পালিয়ে গেছেন হাজার হাজার মানুষ। খাবার ও পানি ছাড়াই লোকজনকে বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করতে হচ্ছে; আর ধীরে ধীরে দুর্মল্য হয়ে উঠছে পেট্রোল।
সশস্ত্র সংঘর্ষে সুদানে তৈরি হওয়া জরুরি পরিস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানিয়েছিলেন, আফ্রিকার দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি দেখার জন্য খার্তুমের কনস্যুলেট চালু রাখা হবে।
ওইসময় তাদের ফেরানোর কোনো পরিকল্পনার কথা না জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, সুদানের অবস্থা ‘বিবেচনা করে’ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মিশনে কর্মরতদের ‘অনেক দায়দায়িত্ব’ দেওয়া হয়েছে এবং সতর্কতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে স্পেনের কূটনীতিক ও নাগরিক সরিয়ে নিচ্ছে দেশটির একটি সামরিক বিমান; এ সময় সামরিক যানগুলো তাদের পাহারা দেয়। |ছবি: রয়টার্স
এর আগে সৌদি এবং অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে কয়েক বাংলাদেশিকেও সুদান থেকে বের করে আনার কথা জানিয়েছিল সৌদি আরব।
সবশেষ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপান সফররত প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার ফেইসবুক পোস্টে বাংলাদেশিদের অন্য দেশের মাধ্যমে সুদান থেকে ফেরানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, “আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করবে, কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন।
“সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে রেজিষ্ট্রেশন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি।”
তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরও দূতাবাসে যোগাযোগ না করার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তাদের ফেরার পথ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “কারণ সকলেই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো।”