
কম্বোডিয়ার দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতা হুন সেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন।
অপ্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) পুনরায় সমস্ত আসন জয়ের তিনদিন পরে এমন ঘোষণা দিলেন হুন। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় চার দশকের শাসনের পর ৭০ বছর বয়সী হুন সেন ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছেন।
হুন সেন নির্বাচনের আগে বলেছিলেন পরবর্তী পাঁচ বছরের মেয়াদে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হুন মানেটের কাছে এই পদটি হস্তান্তর করবেন। ৪৫ বছর বয়সী হুন মানেট বর্তমানে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হুন সেন জানান, ১০ আগস্ট তার ছেলেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পদত্যাগ করলেও হুন সেন ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব ধরে রাখবেন। তার ছেলে হুন মানেট এ বছরের ২৩ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। প্রায়শই তাকে তার বাবার পাশে সমাবেশের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
এর আগে গত ২৩ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় ঘোষণা করে। এরপরেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা কম্বোডিয়ায় কিছু বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছে এমন ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের দল সিপিপি কার্যকর কোনো বিরোধী দলের মুখোমুখি না হওয়ায় ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।
এই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দলকে ভোট থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্যালটে আরও ১৭টি দল ছিল, কিন্তু তারা সবাই খুব ছোট। তারা কেউ কেউ নতুন দল বা সিপিপির সাথে জোটবদ্ধ ছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি টানা ৩৮ বছর শাসন করছেন কম্বোডিয়ার ‘গণতান্ত্রিক মডেলের স্বৈরশাসক’ প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই নামমাত্র ‘গণতান্ত্রিক’ শাসক ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছেন। এমনকি দেশের আদালতকেও ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ গোয়েন্দা গোষ্ঠীকে রেখেছেন হাতের মুঠোয়। সংসদ সদস্যদের পদমর্যাদা থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নেতাদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনে পাঠিয়েছেন।