ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

পরিবেশদূষণে দেশে বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৯ মার্চ ২০২৪

পরিবেশদূষণে দেশে বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু

বাংলাদেশে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক ক্ষতি করছে। সীসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতি করছে, যার ফলে প্রায় ২০ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্টের আনুমানিক বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় উপরের দিকে থাকছে ঢাকা। এই পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে।
‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামের প্রতিবেদনটি আজ দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ু দূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি এবং সীসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ। এর ফলে বছরে ৫২২ কোটি দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও নারীদের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি এই প্রতিবেদনের তথ্য ও উপাত্তগুলো পুরোপুরি গ্রহণ করেননি, আবার একেবারে সত্য নয় তাও বলেননি। মন্ত্রী বলেন, সমস্যা যে নেই তা আমরা কখনোই বলবো না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না তা আমাদের অবশ্যই নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।

মন্ত্রীর বক্তব্যের আগে আজকের প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কোনো অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন একটা উদযাপনের বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচনের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। এটা আমাদের একটা মারাত্মক ভাবনার বিষয়কে তুলে ধরছে। তবে প্রতিবেদনটি তাৎপর্যপূর্ণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে তাদের কোনো দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান দিতে হবে কিংবা সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।

দেশের সব উন্নয়নতৎপরতার মধ্যে সবুজ ও জলবায়ুসহিষ্ণতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বায়ুদূষণে মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দেশের ৮ শতাংশ জিডিপি বায়ু দূষণের কারণে নষ্ট হয়। এটা একটা বড় ধরনের ক্ষতি।

বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষিত বায়ু প্রবাহের উৎস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতের পাঞ্জাবের দূষিত বায়ু পাকিস্তানের পাঞ্জাবে যায়। তেমনিভাবে এক দেশের দূষিত বায়ু অপর দেশে যায়। এতে কাউকে দোষ দেয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।

তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষা অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সীসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুনগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

জনপ্রিয়