যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে ও ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বয়কট করার আহবান জানানো হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত ওসেটির জের ধরে ইসরায়েলে গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে তাতে এখনো পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। এ অবধি যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর থেকে অন্যান্য জায়গাও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া ও আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সর্বপ্রথম বড় ধরনের বিক্ষোভ হয় কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেবার জন্য বললে ১০০’র বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গ্রেফতারের ঘটনা বিক্ষোভকে আরো উসকে দেয়।
আটককৃতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি ইলহান ওমরের কন্যাও রয়েছেন। ইলহান ওমর বলেন, বিক্ষোভ শুরু করেছিল হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু গ্রেফতারের ঘটনার পর সেটি বেশ দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
এমোরি ইউনিভার্সিটি
গত বৃহস্পতিবার সকালে আটলান্টায় কিছু বিক্ষোভকারী এমোরি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে তাঁবু খাটিয়ে বসে যান। তারা ইউনিভার্সিটির সাথে সম্পর্কিত নয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তীতে বহিরাগতদের সাথে ইউনিভার্সিটি কমিউনিটির সদস্যরাও যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা যখন সে স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায় তখন কিছু বিক্ষোভকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সংখ্যা কত এবং তারা কোন ধরনের বিচারের মুখোমুখি হবে সেটি পরিষ্কার করেনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানে কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর ভাষণ বাতিল করেছে। পরবর্তীতে আগামী ১০ মে অনুষ্ঠিতব্য কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমেন্সমেন্ট হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যেটি আয়োজন করা হয় গ্র্যাজুয়েটসদের সম্মাননা জানানোর জন্য। এই কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠান বাতিল করার পর ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সে অনুষ্ঠানে ৬৫ হাজার মানুষ অংশ নেবার কথা ছিল।
ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জনকারী সে শিক্ষার্থী, যাকে ভ্যালিডিক্টোরিয়ান বলা হয়, তিনি ওয়েবসাইটে ইসরায়েল বিরোধী একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই শিক্ষার্থী একজন মুসলিম। এই পোস্টকে ইহুদি বিদ্বেষ হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি
পুলিশ বলছে, গত বুধবার রাতে অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টেক্সাসের পাবলিক সেইফটি ডিপার্টমেন্টের সৈন্যদের দেখা গেছে তারা সুসজ্জিত হয়ে তাদের বাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেছনের দিকে ঠেলছে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি
গত সোমবার নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে কিছু বিক্ষোভকারী তাৎক্ষণিকভাবে তাঁবু টানিয়ে বসে যান। সেখান থেকে পুলিশ ১২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে চারজনকে বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
গত বুধবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি চত্বরে একদল শিক্ষার্থী অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েটস প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে। তবে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অস্বীকৃতি জানান হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
অন্যান্য ইউনিভার্সিটি
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় আরো আরো অন্তত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া কিছু হাইস্কুলেও বিক্ষোভ হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটিতে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বাতিল করতে হয়েছে। বিক্ষোভের সময় চারজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে বুধবার ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হলেও সেখানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
এর আগে গত মঙ্গলবার সিয়াটলে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা যুদ্ধের প্রতিবাদে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এদিকে গত শুক্রবার নিউ জার্সির হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা একটি পদযাত্রার আয়োজন করেন। শিক্ষার্থীরা যাতে সেখানে যোগ না দেয় সেজন্য নিউ জার্সির স্কুল কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি
