ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা

জাতীয়

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা

উপজেলা নির্বাচনে দলের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন। এরপরও কেউ ভোট থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁদেরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁরা নিজ নিজ বিভাগে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

এবার উপজেলা নির্বাচন চার পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রথম পর্বে ১৪ উপজেলায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের চার পর্বের জন্যই প্রযোজ্য বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এসব খবরসহ নানা বিভেদের তথ্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে ওবায়দুল কাদের আজ বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

এতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপদপ্তর সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এই সময় ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাঁদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক।

এই দুই স্থানে সংসদ সদস্যের ছেলেরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। সংসদ সদস্যরা সন্তানদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের নেতাদের দাবির মুখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। মূল লক্ষ্য ছিল সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনটি প্রভাবমুক্ত রাখা। কিন্তু ভোট শুরুর পর দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নিজের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোটে দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এটা পছন্দ করছেন না দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি কঠোরভাবে প্রভাবমুক্ত নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শুধু সন্তান, পরিবার বা নিকটাত্মীয় ছাড়াও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, স্থানীয় পর্যায়ে নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্য মন্ত্রী–সংসদ সদস্যরা আত্মীয়-পরিজন ছাড়াও ‘মাই ম্যান’ তৈরি করার লক্ষ্যে পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামছেন। এতে দলের তৃণমূলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও ব্যবহারের চেষ্টা করছেন মন্ত্রী–সংসদ সদস্যরা। এ জন্যই কড়া অবস্থান।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২ মে সংসদের আগামী অধিবেশন বসছে। ওই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হতে পারে। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে তাঁর অবস্থান তুলে ধরবেন। প্রভাব বিস্তার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। এ ছাড়া শিগগিরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরও বৈঠক হতে পারে। সেখানেও বিষয়টি আলোচিত হবে। নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সরাসরি বহিষ্কারের বিধান রয়েছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে। 

এছাড়া মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করেছে। তাদের প্রার্থীরা বিপুল সংখ্যায় ভোটে অংশ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করলে আর ভোট থাকবে না। এ জন্য দলের নীতিনির্ধারকেরা ভোট সুষ্ঠু ও ভোটারের উপস্থিতি যাতে বাড়ে, সেই চেষ্টায় আছেন। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রভাব না থাকলে কোন্দল-সংঘাতও কম হবে।

জনপ্রিয়