
হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (১৯ মে) সংস্থাটির সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
গভীর ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ১৭ দুপুরে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এর চলমান এজলাসে কিছু আইনজীবী কর্তৃক বিচারক ও বিচারকার্যের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা, চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যে ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি এবং সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হয় যে, বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়।
তারা বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন বিচারককে অপমান করা হয়নি, বরং গোটা দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠেছে। বিচারকের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা কোনোভাবেই একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনশাসিত দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। এজলাসে অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারকের প্রতি হুমকি ও অপমান, এবং বিচারকার্যে অবৈধ বলপ্রয়োগ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ২২৮ ও ৩৫৩ অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
এ দিকে এ ঘটনায় বিএনপিপন্থী আইনজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা আইনজীবী সমিতি ইউনিটের (ঢাকা বার ইউনিট) আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমসহ চারজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রোববার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাদের নোটিশ দেওয়া হয়।
নোটিশ পাওয়া আইনজীবীরা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বারের আহ্বায়ক খোরদেশ আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন, সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবদ, সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম ইলিয়াস হাওলাদার।
প্রসঙ্গত, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় আসামি হানিফ মেম্বার গত ১২ মে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর শনিবার (১৭ মে) পুনরায় জামিন আবেদন করা হলে সেটিও নাকচ করেন বিচারক।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জামিন না মেলায় খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন আইনজীবী প্রকাশ্য আদালতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বিচারককে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে মন্তব্য করেন এবং আদালতের কজলিস্ট ছুড়ে দেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। সেখানে দেখা যায়, আইনজীবী খোরশেদ আলম বিচারকের কাছে নথি দেখিয়ে বলেন, ‘ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান সব একই, বাদী আলাদা-এটা কি সম্ভব?’ এরপর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। অপর আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন বলেন, ‘আমরা সিএমএম কোর্টে রাজনীতি করেছি। আজকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে আমরা গুম হয়ে যেতাম, খুন হয়ে যেতাম।’ বিচারকের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন, তা আমাদের কারণে।’
জানা গেছে, হানিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে জমি দখল, ভাঙচুর, লুটপাট, যৌন নিপীড়ন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ৬ মে মামলা করেন বাদী ফজলুল হক। মামলায় বলা হয়, হানিফ মেম্বার ১৫ বছর ধরে নির্বাচিত না হয়েও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। জমি দখল, গ্যাস সংযোগে অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।