
আমি বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত নই। নানা মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি, হোমওয়ার্কের অভাব এবং প্রশ্নাবলির বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে, যা মূল বিষয়ের পরিবর্তে ইসলামিক বিষয়গুলোতে ফোকাস করে। যেমন বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়, যাতে একজন শিক্ষার্থী ইসলামি জ্ঞান শিখতে পারে। কিন্তু কেনো? বাংলাদেশ একটি বহুসংস্কৃতির দেশ। কেনো বাংলা বিষয় শিক্ষা ইসলামকেন্দ্রিক হতে হবে?
আমি মনে করি সবার জন্য পাঠ্যক্রম অবশ্যই এক হওয়া যাবে না। শিশুর চাহিদা ও বহুসংস্কৃতি অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে! এখানে আমি একজন অভিভাবক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা বিজ্ঞানের দক্ষতা বর্ণনা করছি। আমার বাচ্চাদের কার্যকরভাবে শেখানোর জন্য আমি মূলত একাধিক বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বের ওপর নির্ভর করেছিলাম এবং আমার পিতামাতার শিক্ষাপদ্ধতি আমার পাঠ্যক্রমের বিকাশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিলো। আমার দুই সন্তান বাংলাদেশের ঢাকায় গ্রিন হেরাল্ড স্কুলে পড়েছে ক্যানাডা আসার আগে।
যাই হোক, যখন আমরা ক্যানাডায় চলে আসি, তখন তারা যে পাবলিক স্কুলে দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ গ্রেডে ভর্তি হয়েছিলো তাতে তারা খুশি ছিলো না। তাদের অসন্তোষের কারণ ছিলো, এখানকার স্কুল একটি ছোট ক্যাম্পাসে ছিলো গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের তুলনায় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য শুধু একজন শিক্ষক। আমার ছেলে এই একঘেয়ে ক্লাসরুম এনভায়রনমেন্টে একজন শিক্ষককে সারাদিন দেখে বিরক্ত ছিলো। স্কুলের প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো। তাদের নতুন দেশ ও দুই বেডরুম অ্যাপার্টমেন্টের সীমিত সুযোগ এবং নতুন স্কুলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় ছিলো। তাদের পুরনো বাড়ি, পুরোনো স্কুল, ফেলে আসা বন্ধু ও প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে মন খারাপ ছিলো! তদুপরি ঠান্ডা আবহাওয়া একটা বিরূপ মনোভাব এনে দিয়েছিলো।
অন্যদিকে, গ্রিন হেরাল্ডের জুনিয়র ক্যামব্রিজ সিস্টেমে প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষক ছিলো, যা পারস্পরিক মেলামেশার অভিজ্ঞতা ও ব্যাপক শেখার অভিজ্ঞতার সুযোগ দেয় বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, শিল্প, সংগীত, নাচ ও সেলাইয়ের জন্য তাদের আলাদা শিক্ষক ছিলেন। মিডল স্কুল এবং হাই স্কুলেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিলো, যা ছাত্রদের প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে শেখার যথেষ্ট সুযোগ দেয়।
অন্টারিওতে, স্কুলে পাঠদানের জন্য অন্টারিও স্টাডিজ ইন এডুকেশন, ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবিদ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। প্রাথমিকভাবে, ক্যানাডায় প্রাইমারি ক্লাস এ তেমন কোনো বাড়ির কাজ ছিলো না।
একটু অবাক হয়েছিলাম দেখে আমার ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে না যাওয়া পর্যন্ত সে খুব বেশি হোমওয়ার্ক পায়নি। বাসায় তেমন কিছু পড়াশোনা করতে হয়নি। প্রথম বছর সে অসুস্থ থাকায় হাসপাতাল রুমে, বাসায় হোম টিচারের ব্যবস্থা ছিলো। শিক্ষকের সঙ্গে খেলার ছলে পড়তো, কোনো চাপ ছিলো না। বরং সব শিক্ষক শেষে বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময়ে, সে বেশিরভাগ গেম খেলে, টিভি দেখে এবং লাইব্রেরি থেকে বই পড়ে কাটায়। পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে, বাচ্চারা কমপক্ষে ৩০টি বই পড়া শেষ করে। আমাকে অধিকাংশ সময় কার্ড নিয়ে যেতে হতো লোকাল লাইব্রেরিতে বইগুলো ফেরত দিতে আর নতুন বই আনতে। ওদের হাতে তখনো মোবাইল, আই প্যাড আসেনি। কম্পিউটারে কাজ করতে হতো কখনো কখনো।
ছেলে নিন্টেন্ডো নিয়ে মেতে থাকতো ডাক্তার এবং টিচারদের সঙ্গে স্কুলে ও হাসপাতালে। কারণ, মন ভালো রাখতে গেম, ছবি দেখা, ছবি আঁকা, ক্র্যাফট তৈরি করা, অনেক সাহায্য করতো। হাসপাতালে থাকাকালীন, অসুস্থ শিশুদের জন্য খেলার স্টেশন, লাইব্রেরি ছিলো সবচেয়ে আনন্দের জায়গা। হাসপাতালে স্কুলটিও অনেক আনন্দের ছিলো। কষ্টের মাঝেও শান্তি ও শিক্ষা দেবার অনেক প্রচেষ্টা, হাসপাতাল ক্লাসরুম টিচারের দায়িত্ব ছিলো।
তবে দুজনেই ফিল্ড ট্রিপ, তহবিল সংগ্রহের ইভেন্ট এবং গণিত, বানান, আর্ট এবং সৃজনশীল লেখার মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মজা পেয়েছিলো।
শিক্ষাদানে একাধিক বুদ্ধিমত্তার ধারণাটি বহু সংবেদনশীল শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা পরামর্শ দেয় যে শিশুরা যখন একাধিক ইন্দ্রিয় জড়িত এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকে তখন তারা আরো ভালোভাবে শেখে। আরো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, তাদের চাক্ষুষ, স্পর্শকাতর, শ্রবণশক্তি এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে নিযুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। হাওয়ার্ড গার্ডনারের মতে, আটটি স্বতন্ত্র ধরনের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে যা একজন ব্যক্তির অধিকারী হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভাষাগত, লজিক্যাল-গাণিতিক, শারীরিক-কাইনেস্থেটিক, ভিজ্যুয়াল-স্পেশাল, বাদ্যযন্ত্র, আন্তব্যক্তিক এবং প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে এই সমস্ত পদ্ধতির তাৎপর্য রয়েছে।
শিক্ষাদানে একাধিক বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা ছিলো। আমি আমার সন্তানদের কার্যকরভাবে শেখানোর জন্য একাধিক বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বের ওপর নির্ভর করেছিলাম এবং আমার পিতা-মাতার শিক্ষাপদ্ধতি আমার পাঠ্যক্রমের বিকাশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিলো।
বাংলাদেশে তাদেরকে প্রথমে মন্টেসরিতে না দিয়ে আর্ট স্কুলে দিয়েছিলাম যেনো রং নিয়ে খেলা করতে পারে। বাড়িতেও তাই করতো, সেই আড়াই বছর বয়স থেকে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা ছিলো শিশুরা অঙ্কন আর সংগীতের মাঝে বিচরণ করবে শিশুকাল থেকেই যাতে করে তারা আনন্দের জগতে থাকে। স্কুলের পাঠ্যক্রম যেনো তাদের মাথাকে ভারী না করে তোলে। এবং ছড়া আবৃত্তি করা ও গল্প বলা শেখা ছিলো আমার বাবার বিশেষ শিক্ষার অংশ যা শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও আস্থা এনে দেয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করে।
আমার নিজের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল অভিজ্ঞতা ছিলো অপূর্ব, যা আমি আমার শিশুদের ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্ট করেছি এবং তার সুফল পেয়েছি। স্কুলে নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলো। স্কুলে, বাগান আর সবজি চাষ হতো বোর্ডিংয়ের ছাত্রীদের জন্য। স্কুল গেট ও শ্রেণি কক্ষের সামনে একটুকরো করে বাগান ছিলো, খেলার মাঠ, ও বিশাল একটি পুকুর ছিলো। যদিও সাঁতার শেখার জন্য মেয়েদের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। মাধবীলতার গেট, আর রজনীগন্ধার বাগান এখনো মনে পড়ে।
স্কুল ও বাসায় বাগান করা, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা করা প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা হলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা, শরীর ও মনন গঠনে। আমার আব্বা কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা শেখাতেন এবং সবার সামনে আবৃত্তি করতে উৎসাহ দিতেন, উনি মজার মজার গল্প বলতেন আমাদের ঘুমানোর সময়। আনন্দময় শিক্ষা দেবার বিষয়ে তার জুড়ি ছিলো না।
শিক্ষাদান কোনো একক পদ্ধতি নয়। বাবা-মাকে ও বাসায় অনেক কিছুই শিখাতে হবেভ। সন্তানদের লেখা পড়ায় সাহায্য করতে হবে। শুধু স্কুল এর কারিকুলাম এর ওপর ভরসা করলে হবেনা। আমাদের আম্মা সৃজনশীল ক্লাসের জন্য মাটির আপেল, আম, নানা রকমের পুতুল, নৌকা বানানো শেখাতেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ধার থেকে আনা কালো মাটি আর লাল রঙের এঁটেল মাটি দিয়ে।
আমার আম্মা কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে রং বানাতে হয় ফলের বীজ থেকে থেকে সেটাও শেখাতেন। কাগজ কেটে ফুল, পাখি, প্লেন নৌকা বানানো তার কাছ থেকেই শেখা। রয়েল অন্টারিও জাদুঘরে ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে, আম্মার মাটি দিয়ে পুতুল, আম, নৌকা বানানোর শিক্ষাটা কাজে দিয়েছিলো স্যাটারডে মর্নিং-এ বাচ্চাদেরকে ক্র্যাফটিং শেখাতে। স্কুল ও জাদুঘরে এখন পুতুল ও বিভিন্ন পশুদের আকৃতি বানানো, গল্প বলার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষাদান, এবং অরিগামি শেখানো হয় সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য। আমরা যখন একটি নতুন জায়গায় চলে আসছিলাম, আমি তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম।
প্রাইমারি ক্লাসে, রান্নার ক্লাস সম্পর্কে, বাচ্চাদের জন্য এটি একটি খুব উপভোগ্য অভিজ্ঞতা ছিলো কারণ তারা প্যানকেক, পেস্ট্রি এবং অন্যান্য সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে পেরেছিল। আমি এই ক্লাসের সঙ্গে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। এ ব্যাপারে কোনো খারাপ কিছু দেখিনি বরং দেখেছি ছেলেমেয়েরা কত্ত মজা করে খাবার বানায়, আমি অনেক সময় ওদের সঙ্গে ভলান্টিয়ারিং করেছি।
শিশুদের জন্য একটি জায়গা থাকা গুরুত্বপূর্ণ যেখানে তারা মজা করতে পারে এবং অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং রান্নাঘর তার জন্য উপযুক্ত জায়গা। এই ক্লাসটি বাচ্চাদের খাদ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও শেখায়। রান্না শেখা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য, বিশেষ একটি দক্ষতা যা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাচ্চাদের মজা করার জন্য আরেকটি জায়গা ছিলো গাছ রোপন ও পরিচর্যা শিক্ষা।
শিশুরা আনন্দের সঙ্গে বাগান করতো, নতুন বীজ বুনতে, দেখতো কীভাবে চারা গজায়, স্কুল এ শিক্ষকের সঙ্গে গাছ রোপন করতে, আর প্রতিদিন গাছগুলুর বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করতে, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের হাতে কলমে শিক্ষা বাস্তবিকই আনন্দের। বাদ্যযন্ত্র শেখাটা ছিলো অনেক আনন্দের, দুজনেই, বাঁশি বাজানো, পিয়ানো, ট্রাম্পেট বাজিয়ে আনন্দ পেতো। আমি নিজে সাঁতার, বাগান করা পছন্দ করতাম, তাই ওদেরকেও আগ্রহী করেছিলাম।
রান্না শেখা: এমনকি আমার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সময়, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের দ্বারা উত্পাদিত শাকসবজি থেকে তৈরি দুপুরের খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু স্যুপ এবং সালাদ পরিবেশন করা হয়েছিলো। আমি মনে করি অনেক কিছুই এ থেকে শেখার ছিলো, বিশেষ করে যারা ফুড সিকিউরিটি বিষয়ে গবেষণা করছিলো, আমার বন্ধুরা। উচ্চ শিক্ষার পরিবেশেও বাগান করা এবং রান্নার মতো ক্লাসগুলো বিশেষ করে যারা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
সাঁতার শেখা: আমি সাঁতার এবং বাগান করতে পছন্দ করতাম, তাই আমি তাদের সেই কাজগুলোতে আগ্রহী হতে সাহায্য করতাম। আমি তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে শিখিয়েছিলাম এবং তারা পরে হাই স্কুলে আরো শিখেছিলো।
কোচিং সেন্টার: কোচিং সেন্টার বাংলাদেশ ক্যানাডা দু’জায়গাতেই আছে। প্রাইভেট, পাবলিক, মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতি বাংলাদেশ ও ক্যানাডায় আছে। কোচিং সেন্টার কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। যখন বাবা মা সময় দিতে পারেন না বা সেই বিষয়ে যথার্থ দক্ষতা রাখেন না। স্কুলে পূর্ণ শিক্ষা বাংলাদেশ বা ক্যানাডায় কোথাও দেয়া হয় না। পূর্ণ শিক্ষা স্কুলে দেয়া সম্ভব নয়, যদি সেটা রেসিডেন্সিয়াল বা বোর্ডিং স্কুল না হয়।
আমার আব্বা নিজে অঙ্ক করাতেন ও ইংলিশ পড়াতেন। নিয়মিত বিকেল ও সন্ধ্যে বেলা পড়াতেন। অধিকাংশ সময় প্রাইভেট টিউটর এর ব্যবস্থা থাকতো, বড় ভাই বোনেরাও সাহায্য করতেন।
মুখস্থ করা: বাংলাদেশ ক্যানাডা দু জায়গাতেই আছে। মুখস্থ করা আগেও ছিলো এখনো আছে. অনেক বিষয় মনে রাখার জন্য মুখস্থ করা ছাড়া উপায় নেই। মুখস্থ করা ছাড়াও সৃজনশীল শিক্ষার প্রয়োজন। সায়েন্স, মেডিক্যাল সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি সব সাবজেক্টগুলো বুঝে পড়তে হবে, এবং মুখস্থ করতে হবে। গান, নাচ, বাংলা বা ইংলিশ লিটারেচার বা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।
শাস্তিদান: তবে কিছুদিন আগেও স্কুলগুলোতে করপোরাল পানিশমেন্ট ছিলো গণিত ও আরবি ক্লাসে ছাত্রীরা মার খাবার ভয়ে পড়তে, বাড়ির কাজ শেষ করতে ও মুখস্থ করতে বাধ্য হতো। শাস্তিদান শিশুকে শিক্ষার প্রতি বিরাগ এনে দেয় এবং এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তরায়। কিন্তু এই ব্যবস্থা মাদরাসায় এখনো চালু আছে। আনন্দিত যে, আজ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা শিশু প্রহারের ঘোর বিরোধী।
ক্যানাডায় বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যক্রম বিষয়ে, এখানে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি। আমার বাচ্চারা বাংলাদেশে জুনিয়র ক্যামব্রিজ সিলেবাস অধ্যয়ন করছিলো। বাচ্চারা কয়েক মাস ক্যানাডায় ক্লাস করার পর শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাদের একটি বিশেষ ক্লাসে যাওয়া উচিত। কারণ, তারা ক্লাসরুমে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় এগিয়ে ছিলো।
শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে যথাযথ শিক্ষা পেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য তারা সমৃদ্ধ এবং প্রতিভাধর শিশুদের জন্য হিসেবে কয়েকটি প্রোগ্রাম ডিজাইন করেছে, যা সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে একটু অগ্রগামী বা অধিক পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ, বাচ্চারা তাদের চাহিদা এবং মেধা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম না অনুসরণ করলে শিক্ষা তাদের জন্য ক্লান্তিকর, একঘেয়ে মনে হতে পারে।
আমি আশা করি বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পাশাপাশি প্রতিভাধর শিশুদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। প্রতিটি শিশু অনন্য। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশকে এই ধারণার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে যে এক ধরনের পাঠ্যক্রম সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। নতুন পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে শিক্ষদের উন্নয়নে কতোটা শিক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ একটি বহুসংস্কৃতির দেশ। তাই সবকটি বিষয় শিক্ষা বহুসংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে করা উচিত বলে মনে করি।
শিক্ষাদানে একাধিক বুদ্ধিমত্তার ধারণা বহুসংবেদনশীল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। এটি শেখায় যে শিশুরা যখন চাক্ষুষ, স্পর্শকাতর এবং শ্রবণ ইন্দ্রিয়গুলোর মতো একাধিক ইন্দ্রিয় জড়িত থাকে তখন শিশুরা আরো ভালো শেখে।
তবে শিক্ষা/স্কুল ব্যবস্থা যেনো কোচিং সেন্টার কেন্দ্রিক না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের প্রকৃত শিক্ষা, স্কুল এর শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি, স্কুল এর শিক্ষাদানের লক্ষ্য ও পিতা মাতার সন্তানের প্রতি সময় দেবার ওপর নির্ভর করে! সম্পূর্ণ মানুষ গড়তে হলে, সম্পূর্ণ বাবা ও মা হতে হবে, সম্পূর্ণ শিক্ষক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : কানাডা প্রবাসী