ঢাকা বুধবার, ২৮ মে ২০২৫ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

হজের প্রয়োজনীয় মাসআলা

মতামত

মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৬ মে ২০২৫

সর্বশেষ

হজের প্রয়োজনীয় মাসআলা

১. নাবালেগ যদি পিতা-মাতা বা অন্য কারো সঙ্গে হজ করে তাহলে তার এ হজ নফল বলে গণ্য হবে। বালেগ হওয়ার পর হজ ফরজ হলে তাকে আবার হজ করতে হবে। অন্যথায় হজের ফরজ আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৬৬)

২. কারো ওপর হজ ফরজ হয়েছিল; কিন্তু কোনো কারণে হজ করেনি। ইতিমধ্যে সে ফকির হয়ে গেল, তার ওপর হজ ফরজ থেকে যাবে। যার ওপর একবার হজ ফরজ হয়, আদায় করা ছাড়া তার থেকে এই ফরজ রহিত হয় না। (কিতাবুল মাসাইল : ৩/৯৭)

৩. নাবালেগ বাচ্চা বুদ্ধিমান হলে নিজের ইহরাম নিজেই বাঁধবে এবং হজ ও উমরাহর যাবতীয় কাজ নিজেই করবে। কোনো ওজর ছাড়া তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ ইহরাম বাঁধলে বা তার হজের কাজ অন্য কেউ করে দিলে সহিহ হবে না। নাবালেগ বাচ্চা যদি বুদ্ধিমান না হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক ইহরাম বাঁধবে। তার নিজের ইহরাম বাঁধা ধর্তব্য হবে না। তবে নাবালেগ বাচ্চা যদি ইহরাম বাঁধা ছাড়াই পিতা-মাতা বা অন্য কারো সঙ্গে হজের সফরে যায় তাহলেও তাতে কোনো গুনাহ হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৫৩৫-৩৬)

৪. বোবা ব্যক্তির ইহরাম বাঁধার জন্য তালবিয়া পড়তে হবে না। তার জন্য হজের নিয়তই ইহরাম বলে গণ হবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/১৮১-৮২)

৫. বেশি বেশি তালবিয়া পড়া। যেকোনো স্থান ও অবস্থার পরিবর্তনে তালবিয়া পড়া সুন্নত। যেমন: ঘরে-বাইরে, পথেঘাটে, বাসে, বিমানে, প্রত্যেক নামাজের পর, উপরে উঠার সময়, নিচে নামার সময়, ঘুমানোর আগে ও পরে। এমনিভাবে কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে আগে তালবিয়া পড়া তারপর সালাম দেওয়া। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৯২)

৬. প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে তালবিয়া পড়বে। মোয়াল্লিম বা অন্য কারো সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়বে না। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৫০২)

৭. যখনই তালবিয়া পড়বে এক সঙ্গে তিনবার পড়া মুস্তাহাব। (মানাসিক : ১০২)

৮. হজের সফরে সাথী বা অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করা ও কারো কোনো জিনিস না বলে নেওয়া নিষিদ্ধ। হজের সফরে যথাসম্ভব অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। (মানাসিক : ১১৭)

৯. ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর কাঁথা, কম্বল, চাদর ইত্যাদি দ্বারা ঢাকা যাবে। (মানাসিক : ১২৩)

১০. ইহরাম অবস্থায় ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে। অনেকে মনে করে ইহরামের চাদর খুললেই ইহরাম খুলে যায়। একথা ঠিক নয়। (মানাসিক : ৯৮)

ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত বেল্ট, ব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। (মানাসিক : ১২২)

১১. ইহরাম অবস্থায় মশা-মাছি, সাপ-বিচ্ছু, পোকা-মাকড় ও হিংস্র প্রাণী মারা যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২৫২)

১২. ইহরাম অবস্থায় চশমা, ঘড়ি, আংটি ও মাফলার ব্যবহার করা যাবে। (আদ্দুরুল মুখতার : ২/৪৮৯)

১৩. ইহরাম অবস্থায় মহিলারা পায়ের পাতা ঢেকে যায় এমন জুতা, হাত-পায়ের মোজা ও কালো বোরকা ইত্যাদি পরতে পারবে। (মানাসিক : ১১৫)

১৪. উমরাহর জন্য কোনো নির্ধারিত সময় নেই। বছরের যেকোনো সময়ই উমরাহ করা যায়। তবে ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ এই পাঁচদিন উমরাহ করা মাকরুহ। (মানাসিক : ৪৬৪)

১৫. মক্কায় অবস্থানকালে মসজিদে হারামে নামাজ পড়া উচিত। কারণ মসজিদে হারামে নামাজ পড়লে প্রতি রাকাতে এক লক্ষ রাকাতের নেকি পাওয়া যায়। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস : ৫৮৫৮)

১৬. পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করতে অক্ষম ব্যক্তি হুইল চেয়ার বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে তাওয়াফ করতে পারবে। (মানাসিক : ১৫২)

১৭. সাত চক্করে এক তাওয়াফ পূর্ণ হয়। এক তাওয়াফে স্বেচ্ছায় সাতের অধিক চক্কর দেওয়া নিষেধ। যদি কেউ স্বেচ্ছায় সাতের অধিক চক্কর দেয় তাহলে অষ্টম চক্কর নতুন তাওয়াফ বলে গণ্য হবে এবং তাকে ওই অতিরিক্ত চক্করসহ সাত চক্কর পুরা করতে হবে। তবে ভুলবশত সাতের অধিক হয়ে গেলে অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৯৬)

১৮. আসরের পর তাওয়াফ করলে তাওয়াফের নামাজ মাগরিবের ফরজের পর সুন্নতের আগে পড়বে। (মানাসিক : ১৫৭)

১৯. হারামের সীমানা : কাবা ঘর থেকে পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে নয় মাইল করে। আর উত্তর দিকে তিন মাইল। (মানাসিক : ১৮২)

২০. মক্কা শহর অনেক আগেই মিনা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে আরাফাতের ময়দানকেও মক্কার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং আরাফাতের ময়দানের বাহিরেও মক্কা শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই মক্কায় আসার পর মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে অবস্থানের দিনসহ মক্কা থেকে বিদায়ের পূর্ব পর্যন্ত যদি কারো ১৫দিন থাকা হয় তাহলে সে মুকিম বলে গণ্য হবে এবং চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ চার রাকাতই পড়বে। অতএব যদি কেউ মুসাফির ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর নিজে নিজে দুই রাকাত পড়ে নেবে। আর যদি মক্কায় আসার পর মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাত মিলিয়ে ১৫দিন থাকা না হয় তাহলে মক্কা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় কসর করবে। অর্থাৎ নিজেরা জামাত করলে বা একাকি পড়লে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বে। তবে মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করলে চার রাকাতই পড়তে হবে। মুফতি তাকী উসমানিসহ বড় বড় মুফতিগণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ফাতাওয়াই দিয়ে থাকেন। (মাসাইলুল হজ ও ওয়াল উমরাহ : ১০৭)

২১. ভিড় থাকলে তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ মাকামে ইবরাহিমের পেছনে পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং মসজিদের যেখানে সহজ হয় সেখানেই আদায় করবে। (মানাসিক : ১১৫)

২২. মক্কা, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফা মিলে যাদের ১৫দিন থাকা হচ্ছে এবং ১৫দিন থাকার নিয়তও করেছে তারা মুকিম। যারা মুকিম হবে তারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে, তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। আর যাদের ১৫দিন থাকতে হবে না এবং থাকার নিয়তও করবে না তারা মুসাফির থাকবে। তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। (রদ্দুল মুহতার : ২/৫১৫)

২৩. হজ ও উমরাহর একটি ওয়াজিব হলো মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা। তবে কারো মাথায় চুল না থাকলে (আগে মুণ্ডানোর কারণে হোক বা অন্যকোনো কারণে) মাথায় ক্ষুর ঘুরাতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৬১২)

২৪. মসজিদে নববিতে এক রাকাতে পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সাওয়াব পাওয়া যায়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস :১৪১৩)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

 

জনপ্রিয়