ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

লিখিত পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষক, সর্বনাশা সিদ্ধান্ত!

মতামত

মাছুম বিল্লাহ

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ২৭ মে ২০২৫

সর্বশেষ

লিখিত পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষক, সর্বনাশা সিদ্ধান্ত!

শিক্ষার ক্রমাবনতির যুগে হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের কোনো মান যাচাই করার সুযোগ ছিলো না, জাতির কারিগর শিক্ষকরা নিয়োগে পেতেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও টাউট-বাটপারদের মর্জির ওপর। ফলে কোন শিক্ষক শিক্ষাদানের উপযুক্ত, কোন শিক্ষক উপযুক্ত নন সেটি যাচাই-বাছাই করার তেমন কোনো সুযোগ ছিলো না। 

এখানে চলতো অবৈধ লেন-দেন। শিক্ষাবিদদের চিন্তা, আলোচনা, সমালোচনা ও উপদেশের পর সরকার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে চালু করেছিলো বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। এটি প্রথম দিকে এবং বলতে গেলে এখনো পুরোপুরি অশুভ শক্তির রাহু থেকে মুক্তি পায়নি, তারপরেও বলা যায় একটি শুভ ব্যবস্থার উদ্বোধন হয়েছিলো এবং অবহেলিত বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বের তুলনায় মানসম্পন্ন শিক্ষক পেতে শুরু করেছিলো। কিন্তু সেটিকে বুঝি আর আগাতে দিলো না!

শোনা যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতার পরীক্ষা ও নিয়োগ জট কাটাতে শিক্ষকদের লিখিত পরীক্ষা বাদ দিয়ে দ্রুততম সময়ে যাতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য শুধুমাত্র মৌখিক ও বহু নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে এনটিআরসিএ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ, হচ্ছে এই টিক চিহ্নের পরীক্ষা, তথাকথিত বহু নির্বাচণী পরীক্ষা আমাদের শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি করেছে সেটি পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় লেগে যাবে কাটিয়ে উঠতে। 

কারণ, কোনো লেভেলের শিক্ষার্থীরা বাংলা কিংবা ইংরেজি কোনো ভাষাতেই লিখে কিছু প্রকাশ করতে পারছেন না। বর্তমানে যে এসএসসি পরীক্ষার খাতা পরীক্ষণ চলছে অনেক পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষক জানাচেছন ‘স্যার, শিক্ষার্থীরা মোবাইলের মতো সংক্ষিপ্ত ভাষায় পরীক্ষা দিয়েছে। তাতে না আছে মূল বক্তব্য, না আমরা কিছু বুঝতে পারছি। তবে শিক্ষার্থীরা যে কিছু বুঝতে পারেনি সেটি স্পষ্ট।’

এই সর্বনাশা খেলার মধ্যে দিয়ে আমাদের শিক্ষকরাও তৈরি হয়েছেন। এখন শিক্ষকতা করতে গিয়ে তাদের একটু পড়াশোনা করতে হবে, জানতে হবে, জানাতে হবে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করতে হবে। সেটি যদি বন্ধ করা হয় অর্থাৎ তারা যদি টিক চিহ্নের মাধ্যমে শিক্ষক নির্বাচত হন তাহলে অর্ধ নয় তারা সিকি শিক্ষকে পরিণত হবেন অর্থাৎ একেবারেই অপূর্ন শিক্ষক হবেন। কাজেই এই সর্বনাশা খেলা থেকে এনটিআরস্এি, মাউশি এবং মন্ত্রণালয়কে সরে আসতে হবে।

দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’ ও ডিজিটাল প্রত্রিকা ‘দৈনিক শিক্ষাডটকম’ এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট ছেপেছে নিম্নরূপে--’কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার সব আয়োজন করে আমরা শাসিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বিএনপি সরকারের হাতে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই চালু ছিলো শিক্ষক পদে প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী সনদ পেতে আগ্রহীদের জন্য লিখিত পরীক্ষার বিধান। 

আমলা-মামলা ও হামলায় প্রতিষ্ঠানটি প্রায় তছনছ হয়ে গেছে গত ১৬ বছরে। জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে ধীরে ধীরে। গত রোববার (২৫ মে) সকাল সাড়ে দশটায় আয়োজন করা হয় আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের। যেটাকে কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার সঙ্গে তুলনা করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য লিখিত পরীক্ষা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্যই ওই বৈঠক ডাকা হয়। শুধু এমসিকিউ নেয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। যুক্তিও খাড়া করা হয়েছে।’

এটি সত্য যে, সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজার হাজার পদ শূন্য। আর এতে পড়াশোনা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। অথচ দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার। আর প্রচলিত প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। তাই এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে তিনদিনে রেজাল্ট দিয়ে আর চতুর্থদিন থেকে ভাইভা শুরু করে দ্রুততার সঙ্গে হাজার হাজার শূন্য শিক্ষক পদ পূরল করা যাবে।

আপাত দৃষ্টিতে এটিকে খুব কার্যকরী প্রতিশেধক মনে হলেও এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য শুধু যে, এমসিকিউ পরীক্ষারই আশ্রয়ই নিতে হবে এমনটি নয়।

আমরা মনে করি বিষয়ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে একদিন এবং পরবর্তী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার খাতা পরীক্ষণ শেষ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষাটি হয়তো শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার বিকেল থেকেই খাতা পরীক্ষণ শুরু হবে। আরো ভালো হয় যখন বৃহস্পতিবার বা রোববার কোনো সরকারি ছুটি থাকে অর্থাৎ একাধারে তিনদিন ছুটি যখন হবে এনটিআরসিএর পরীক্ষা ওই সময়ে নিতে হবে। প্রথম বন্ধের দিন পরীক্ষা নিয়ে ওইদিন থেকেই খাতা পরীক্ষণ শুরু করতে হবে।

খাতা পরীক্ষণ করানোর জন্য ঢাকা সিটি এবং আশে পাশে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শিক্ষাবোর্ডে ডেকে (এনটিআরসিএতে যদি বিশাল হলরুম থাকে ভালো এবং আরো বেশ কিছু রুম খালি থাকে তাহলে সেখানে না হয় শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে হলরুমে এবং আরো বেশ কয়েকটি রুমে কয়েক শত শিক্ষক খাতা দেখবেন। শনিবার কিংবা রোববারের মধ্যেই যাতে খাতা দেখা শেষ হয়। শিক্ষকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা এনটিআরসিএ থেকেই করতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষকদের থাকার এ ধরনের জায়গা আছে। পুরো না থাকলে ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কয়েক শত শিক্ষককে একত্রে থাকতে পারেন। এভাবে খাতা পরীক্ষণ করা হলে একদিকে যেমন সময় কম লাগবে, তেমনি, এক জায়গায় বসে খাতা দেখলে ভুল ত্রুটি কম হবে, বেশি অসংগতি পরিলক্ষিত হবে না সেটি ঘটে শিক্ষকরা যখন নিজ বাড়ীতে বসে খাতা পরীক্ষণ করেন। তারা খাতা দেখা শেষ করে ঐদিনই সম্মানী হাতে হাতে নিয়ে যাবেন। তাতে তাদের আগ্রহ বেড়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে ডাকলে তারা আগ্রহ করে আসবেন।

একইভাবে, সেট করা মৌখিক পরীক্ষাও এক থেকে দুই দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। সেটিও এভাবে অনেক শিক্ষক আসবেন কয়েক শত মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড হবে। মৌখিক পরীক্ষার জন্যও সেট করা প্রশ্ন থাকবে যাতে ‘খেজুরে আলাপ’ করে অযথা সময় নষ্ট না হয়, যেটি এখন করা হয়। লিখিত পরীক্ষা পরবর্তী সপ্তাহে কিংবা আরো এক সপ্তাহ পরে শুক্র ও শনিবার একদিনে প্রায় সব বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষাও শেষ করে ফেলতে হবে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও মৌখিক পরীক্ষা যারা গ্রহণ করবেন তাদের একটি কার্যকরী ওরিয়েন্টেশন দিয়ে নিতে হবে যাতে কোথাও কোন অসংগতি না হয়।

বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা যেভাবে অথাৎ যে ঢিমে তেতালা গতিতে চলছে সেভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আর কর্তৃপক্ষ যা চাচ্চেন সেটিও করা যাবে না। কারণ, তাতে আমরা শিক্ষক পাবো না, পাবো কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা যাদের দ্বারা আমাদের শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। আর শিক্ষার্থীরা এতো বছরে যে বহুবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

 

জনপ্রিয়