ঢাকা রোববার, ২৫ মে ২০২৫ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

মতামত

রাসেল মাহমুদ হাবিবী

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৪ মে ২০২৫

সর্বশেষ

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

প্রতীকী ছবি

ইসলাম মানবতার মুক্তি ও শান্তির পয়গাম নিয়ে আগমনকারী এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এই জীবন বিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের অধিকার ও মর্যাদাকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামে নারীর মৌলিক অধিকার এবং তাদের উন্নত অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইসলামের পূর্বে বিশেষত আরব সমাজে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তাদের কোনো প্রকার স্বাধীন অধিকার ছিল না। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে তা পরিবারের জন্য অমঙ্গলজনক মনে করা হত। নারীকে পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হত। তাদের নিজস্ব মতামত বা অধিকারের স্বীকৃতি ছিল না। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর অংশ ছিল না এবং বিবাহের ক্ষেত্রেও তাদের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হত না। এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতিতে ইসলাম নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে ঘোষণা করে যে, নারী ও পুরুষ উভয়েই মানুষ এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদার ভিত্তি হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি।

পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। (সুরা আল-হুজুরাত: ১৩) এই আয়াত নারী ও পুরুষের মৌলিক সমতার এক স্পষ্ট বার্তা দেয়। ইসলাম নারীকে কেবল পুরুষের সমকক্ষ হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়নি, বরং কিছু ক্ষেত্রে তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান ও গুরুত্ব আরোপ করেছে।

ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জ্ঞানার্জন অত্যাবশ্যকীয় করেছে। নারীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করার কোনো অবকাশ ইসলামে নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৪) ইসলামের স্বর্ণযুগে নারীরা জ্ঞানচর্চায় অসামান্য অবদান রাখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন হাদিস, ফিকাহ, কাব্যচর্চা ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও পারদর্শী। বহু সাহাবি তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতেন। উম্মে সালমা (রা.)-সহ অন্যান্য নারী সাহাবিগণও জ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। নারী তার নিজস্ব সম্পদের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে। পিতার সম্পত্তি, স্বামীর মোহরানা ও নিজের উপার্জিত অর্থের উপর তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এই সম্পদে তার স্বামী বা অন্য কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। বিবাহে নারীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো মোহরানা, যা স্বামী স্ত্রীকে প্রদান করতে বাধ্য। এটি স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পদ। এ ছাড়া ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সুনির্দিষ্ট অংশীদারত্ব প্রদান করেছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে নারীর অংশ পুরুষের অর্ধেক, তবে ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পুরুষের উপর ন্যস্ত থাকায় এই বণ্টন ন্যায়সঙ্গত। বিবাহের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর, এমনকি স্ত্রী ধনী হলেও।

বৈবাহিক জীবনে ইসলাম পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার উপর গুরুত্ব দেয়। নারীকে তার জীবনসঙ্গী নির্বাচনের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সম্মতি ছাড়া বিবাহ দেওয়া ইসলামে জায়েজ নয়। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে সদ্ব্যবহার, ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে। স্ত্রীর প্রতি কোনো প্রকার শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 

ইসলামের নামে সমাজে প্রচলিত কিছু কার্যকলাপকে ইসলামের মূল শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। ইসলাম নারীকে যে অধিকার ও সম্মান দিয়েছে, তা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অনুধাবন করতে হবে। নারীর পর্দা তার সুরক্ষা ও সম্মানের প্রতীক, যা তার অগ্রগতির পথে কোনো বাধা নয়।

পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম নারীকে তার মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকারের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি দিয়েছে। আধ্যাত্মিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। এই শ্বাশত শিক্ষাকে সঠিকভাবে জেনে সমাজে তার বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য।

লেখক: আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

জনপ্রিয়