ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

কবরস্থান পাহারায় সশস্ত্রবাহিনী! 

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সর্বশেষ

কবরস্থান পাহারায় সশস্ত্রবাহিনী! 

এক জাতীয় মাদকের ব্যবহার রুখতে জারি করা হলো জরুরি অবস্থা। পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরালিওন নামক ছোট্ট দেশটির কাছে এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই মাদক। শুধু জরুরি অবস্থা জারি করে নিশ্চিন্ত হতে পারেননি সে দেশের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো, কবরস্থানগুলিতে মোতায়েন করতে হয়েছে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী।

সিয়েরা লিওনে এখন আতঙ্কের কারণ কুশ। কুশ এক ধরনের মাদক। কিন্তু সে দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের কাছেই কুশ যেন ‘অমৃত’। হাজার হাজার মানুষ ছুটছেন এই মাদকের পেছনে। ভয়াবহতা আর তৈরির প্রক্রিয়ার জন্য একে ‘পিশাচ মাদক’ও বলা হয়।

যে সব পদার্থ মিশিয়ে কুশ তৈরি করা হয়, তা চিকিৎসকদের আরও বেশি করে চিন্তায় ফেলেছে। অনেকেই এই মাদককে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বলেও উল্লেখ করছেন। বহু প্রচার করেও এই মাদক ব্যবহার থেকে দেশের মানুষকে বিরত করতে পারেনি প্রশাসন। দেশে তাই জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিলো না বলে দাবি করেছেন বায়ো।

গত ৪ এপ্রিল গভীর রাতে গোটা সিয়েরা লিওন যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এই জরুরি অবস্থার নেপথ্যে একমাত্র কারণ কুশ! তিনি বলেন, বর্তমানে বিধ্বংসী সিন্থেটিক মাদক কুশের অপব্যবহারের কারণে আমাদের দেশ অস্তিত্বগত সঙ্কটে ভুগছে। এই মাদক এক মৃত্যুফাঁদ। মানুষ এই মাদক সেবন করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

কুশ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ফেন্টানাইল, গাঁজা, ফর্মালডিহাইড জাতীয় দ্রব্য। শুধু তা-ই নয়, এই মাদক তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সালফার। আর এই সালফার জোগাড় করতেই প্রয়োজন পড়ছে মানুষের হাড়! হাড় গুঁড়ো করে মাদকে মেশানো হচ্ছে।

মানুষের হাড় জোগাড় করতে মাদক প্রস্তুতকারকেরা হানা দিচ্ছে কবরস্থানে। কবর খুঁড়ে বার করে আনা হচ্ছে মানুষের কঙ্কাল। তার পর সেই কঙ্কালের হাড় গুঁড়ো করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে ফেলা হচ্ছে কুশ। সিগারেট, বিড়ি বা গাঁজার মতো এই মাদক সেবন করছেন সিয়েরা লিওনের বাসিন্দারা।

কবর থেকে কঙ্কাল চুরি আটকাতে কবরস্থানের চারপাশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে সিয়েরা লিওন সরকার। সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তিকে দেখলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। জুলিয়াস সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেভাবেই হোক কুশ ব্যবহার আটকাবেই তারা।

বছর কয়েক আগেও এই দেশের অবস্থা এমন ভয়াবহ ছিল না। বর্তমানে গোটা দেশ যেনো নেশায় আচ্ছন্ন। যে ব্যক্তি এই মাদক সেবন করেন, তিনি কয়েক ঘণ্টা নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন। বিশেষত, তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই এই মাদক সেবনের প্রবণতা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাদক এক বার সেবন করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।

পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে বেকারত্বের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। দু’বেলা পেটভরা খাবার জোগাতে হিমশিম খান বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু খাবারের থেকেও কুশ সেবনের প্রবণতা বেশি। আর তা কেনার জন্য অর্থ জোগাড় করতে অপরাধ জগতে পা দিচ্ছেন অনেকেই।

কুশ ব্যবহারের ফলে স্নায়ু শিথিল হয়ে যায়। স্বাভাবিক চিন্তাভাবনার শক্তি হারিয়ে ফেলেন সেবনকারী। তবে কুশে ব্যবহৃত ফেন্টানাইলের মতো দ্রব্যগুলির নেতিবাচক প্রভাব ভয়ঙ্কর।
এই মাদকের ফলে সিয়েরা লিওনে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর হার। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, সে দেশের হাসপাতালগুলিতে ভর্তি

হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই কুশ মাদকে আসক্ত। এই মাদকে আসক্ত অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তিদের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দেও সিয়েরা লিওনে এই মাদকের ব্যবহার এতটা ছিল না। সরকারি এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে গোটা দেশে কুশ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১০১।
২০২০ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই মাদক ব্যবহার বেড়েছে চার হাজার শতাংশ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিরাই এই মাদকে আসক্ত হচ্ছেন বেশি।

চিকিৎসকদের মতে, কুশ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি এবং ফুসফুসে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। ফলে এক বা একাধিক অঙ্গ বিকল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রধানত অঙ্গ বিকল হয়েই মৃত্যু হয় কুশ মাদকে আসক্ত ব্যক্তির।

এই কুশের দাম বেশ কম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, মাত্র ৮০০ টাকার মাদক কিনে বেশ কয়েক জন নেশা করেন। তবে যে দেশের বার্ষিক আয় মাত্র ৪২ হাজার টাকা, সে দেশের মানুষের কাছে কুশ এক বিলাসিতা। কিন্তু নেশার টানে সেই বিলাসিতার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার যুবক। সূত্র: আনন্দবাজার 

জনপ্রিয়