
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ স্তম্ভ। এ হজ পালন করার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা প্রতি বছর হজের মৌসুমে মক্কা নগরীতে সমবেত হয়। লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় মক্কার আলোকিত পরিবেশ। হাজিদের ওপর বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সাদা কাপড়ে আবৃত দেহ নিয়ে বায়তুল্লাহর চতুর্দিকে তাওয়াফ করেন হাজিগণ। হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা স্পর্শ করার আশা নিয়ে হেঁটে চলেন মাতাফে। অদৃশ্য রহমতের জোয়ারে সিক্ত হন হজ পালনকারীরা। হজ মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধির অনন্য সোপান। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ হয়। হজ একই সঙ্গে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। হজ পালনের মাধ্যমে বান্দার সমুদয় গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। নিষ্পাপ হয়ে যায় হজ আদায়কারী। আর কবুল হজের বিনিময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাত দান করেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলল না অথবা অশ্লীল কাজ করল না, তাহলে সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে। (বুখারি শরিফ: ১৫২১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক উমরা পরের উমরা পর্যন্ত সময়ের জন্য কাফফারা স্বরূপ এবং মকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। (বুখারি শরিফ: ১৭৭৩)
হজ পালনে দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর হয়
কিছু মুসলমান হজ পালনে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় হওয়াকে খুবই ভয় পায়। অথচ হজ পালনের মাধ্যমে বান্দার দরিদ্রতা ও গুনাহ দূরীভূত হয়। কারণ, হজ করা মানে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। সুতরাং হজের জন্য স্বীয় মাল খরচে কৃপণতা করার কোনো কারণ নেই। হাপর যেভাবে লোহার ময়লা দূর করে দেয়, অনুরূপভাবে হজ বান্দার গুনাহ দূর করে। এ মর্মে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা হজ ও উমরা পরপর একত্রে আদায় করো। কেননা, তা দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে। যেভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। কবুল হজের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়। (তিরমিজি শরিফ: ৮১০)
হাজিগণ আল্লাহর মেহমান
হাজিগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভে নিজেকে সোপর্দ করে দেয় এবং স্বীয় গুনাহ মার্জনার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করে। তাই আল্লাহ তায়ালা হজ পালনকারীদের অনন্য মর্যাদায় ভূষিত করেন। হাদিস শরিফে হজ ও ওমরা পালনকারীদেরকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, হজযাত্রীগণ ও উমরার যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। অতএব তারা যদি তাঁর নিকট দোয়া করেন তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর নিকট ক্ষমা চায় তাহলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)
হজে রওনা হওয়ার পর মারা গেলে হজের সাওয়াব পাবে
হজের উদ্দেশে বের হওয়ার পর মাঝপথে রোগাক্রান্ত হয়ে অথবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কারো ইন্তেকাল হলো। যার দরুন সে হজ পালন করতে পারল না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকেও মকবুল হজের সাওয়াব দান করবেন। এ মর্মে হজরত আবু ইয়ালা (রা.)-এর সূত্রে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো এবং মারা গেল তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হাজির সাওয়াব লেখা হতে থাকবে। এবং যে ব্যক্তি উমরায় বের হয়ে মারা গেল তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত উমরাকারীর সাওয়াব লেখা হতে থাকবে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জেহাদে বের হয়ে মারা গেল তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত গাজির সাওয়াব লেখা হতে থাকবে। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ১১১৪)
হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ
শরিয়তসম্মত কোনো ওজর-আপত্তি না থাকলে সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবান কোনো মুসলামন বিনা ওজরে হজ বর্জন করতে পারে না। হজ বর্জনের পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হওয়ার পরও কোনো মুসলমান যদি হজ না করে তাহলে সে ইহুদি-নাসারা হয়ে মরবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যাকে প্রচণ্ড অভাব অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, তারপরও সে হজ না করে মরতে বসেছে, তাহলে সে চাইলে ইহুদি হয়ে মরুক অথচা চাইলে খ্রিস্টান হয়ে মরুক। (দারমি: ১৮২৬)
আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে জীবনে একবার হলেও হজ করার এবং আল্লাহর ঘরে হাজির হওয়ার তাওফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম