
দেশের কারিগরি শিক্ষার্থীরা ছয় দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছে। শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে আসলেও আন্দোলন পুরোপুরি স্থগিত করেনি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন চাকরিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
দেশের শিক্ষাবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে অংশ নেয়া বাকি ২৬ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি ৫ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি।
গত ২১ এপ্রিল সকাল থেকে শুরু হয়ে ২৩ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত দৈনিক শিক্ষাডটকমের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি জরিপ চলানো হয়। জরিপের প্রশ্নটি ছিলো, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে কমছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী- আপনার মত কী?
দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত এই জরিপে অংশ নিয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৬৬ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৬৯ জন এবং ‘না ভোট দিয়েছেন ৮৬ জন মানুষ। জরিপে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’–এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য নেই’ নামে আরেকটি ঘর ছিলো।
প্রসঙ্গত, বিগত পাঁচ বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী কমেছে অনেক। এবিষয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান বাড়লেও সেগুলোয় শিক্ষক সংকট, উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের অভাব এবং শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
এদিকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দাবিতে আন্দোলন করছেন।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও 'কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করতে হবে। ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।