ঢাকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে টিপু-প্রীতি হ*ত্যা মা*মলার বিচার

বিবিধ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৪ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১০:২৪, ২৪ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে টিপু-প্রীতি হ*ত্যা মা*মলার বিচার

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে জনসমক্ষে গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। হামলার সময় তার গাড়ির পাশে রিকশায় বসে থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এ ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি মামলার বিচারকাজ। এখনও সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে বিচার প্রক্রিয়া। তবে কবে নাগাদ শেষে হবে তাও বলতে পারছে না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ বিচার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে মামলার বাদী নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত সাবেক কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলিও দিয়েছেন গা ঢাকা।

এ বিষয়ে মামলার বাদী ফারহানা ইসলাম ডলির আইনজীবী গাজী জিল্লুর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সরকারে পট পরিবর্তনের পর নিরাপত্তার ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছে না মালার বাদী ডলি। যে কারণে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারছেন না তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদালতে আসবেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।

এদিকে আলোচিত এ মামলার বাদী নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলির মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়িটির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ বিচারাধীন। এ মামলায় সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওইদিন সাক্ষ্য দিতে কেউ আদালতে হাজির হননি। এজন্য রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেন।

মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা করেন। তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন।

এ মামলায় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন শাহজানপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। প্রতিবেদনে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০ জুন এ মামলায় বিদেশে পলাতক দুই সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, বিদেশে পলাতক আন্ডার ওয়ার্ল্ডের দুই সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিক, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা।

এদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২৬ জন গ্রেফতার হন। আসামিদের মধ্যে দুজন জামিনে আছেন, অন্যরা কারাগারে। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় জামিনে থাকা দুই আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। এছাড়া সাত আসামি পলাতক রয়েছেন।

এদিকে মামলার আসামি মোরশেদ আলম পলাশ ও মারুফ রেজা সাগরের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল বলেন, মামলাটি চার্জ গঠনের পর বাদীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বাদী হাজির না হওয়ায় আসামিপক্ষের জেরা শেষ করা যাচ্ছে না। ন্যায় বিচারের স্বার্থে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তির দাবি জানান আসামিপক্ষের এ আইনজীবী।

আরেক আসামি সোহেলের আইনজীবী মো. শামসুজ্জামান সুরুজ বলেন, আসামির জবানবন্দির ভিত্তিতে আমার মক্কেলকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি জামিনে রয়েছেন। সাক্ষ্যপ্রমাণে তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরা সমাজের সব জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে খুন হন তাদেরই দলীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। হত্যাকাণ্ডের ওই সময় রিকশায় বসে থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এ মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। বাদী সাক্ষ্য দিতে না আসলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। আমরা দ্রুত এ মামলার বিচার শেষ করতে চাই।

জনপ্রিয়